মমেকের সহপাঠী ও কলেজ প্রিন্সিপালের চোখে ভূটানের ‘হবু’ প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 5:41 pm | September 19, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রায় দুই যুগ আগের স্মৃতিই জাগিয়ে তুললেন ডা: মো: শফিকুল বারী তুহিন। মানসপটে উজ্জ্বল হয়ে থাকা টুকরো টুকরো স্মৃতি’র মায়াজাল অন্যদের মতো এখন গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে যাচ্ছে তাকেও। আর হবেই বা না কেন, সহপাঠী হিসেবে একজন হবু প্রধানমন্ত্রীর দুরন্ত উচ্ছ্বল, উচ্ছ্বাসে ভরপুর ছাত্রজীবন ও সোনাঝরা দিনগুলোর নীরব স্বাক্ষী যে তিনিই!

ফলে স্বভাবতই আবেগ উদ্দীপ্ত, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) ২৮ তম ব্যাচের ছাত্র ডা: লোটে শেরিং’র কলেজ জীবনের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের ১৭৭ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গেই সমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন লোটে।

অসম্ভব এই মেধাবী লাইব্রেরিতেই সময় দিতেন বেশি। তাঁর বন্ধু অন্ত:প্রাণ মানসিকতার মধ্যে দিয়ে ওই সময়ই নেতৃত্বগুণেরও কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়।’ একই রকম তথ্য দেন তাঁর এই কলেজেরই আরেক বন্ধু ডা: আসাদুজ্জামান রতন। এই চিকিৎসক বলেন, ‘লোটে শেরিং অনেক চুপচাপ থাকতেন। পড়াশুনাই ছিলো তাঁর একমাত্র ধ্যান।

কঠিন অধ্যাবসায়ই তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের কলেজ জীবনের এই পরম বন্ধুর আকাশছোঁয়া এই সাফল্যে আমরা গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত।’

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে কথা হয়। নিজেদের বন্ধুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়া, শিক্ষাজীবনের গল্প বলতে গিয়ে প্রকারান্তরে স্মৃতির জানালাই যেন খুলে দেন তাঁরা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) প্রিন্সিপাল হিসেবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর তাদের দেশের ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হয়ে ওঠার খবর রীতিমতো পুলকিত করেছে অধ্যাপক ডা: আনোয়ার হোসেনকেও। প্রবীণ এই শিক্ষকের ভাষ্যে- লোটে শেরিং’র হাত ধরেই বিশ্ব পরিমন্ডলে এই কলেজ পরিচিতি পাবে নতুনভাবে।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০৩, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ময়মনসিংহ তথা বাংলাদেশে অবস্থানকালে কেমন ছিলো ভুটানের ক্ষমতার মসনদে বসতে যাওয়া জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ডিএনটি’র শীর্ষ নেতা ডা: লোটে শেরিং’র যাপিত জীবন, আনন্দ-বেদনার কাব্য সেইসব স্মৃতি ওঠে আসে তাঁরই সহপাঠী ডা: মো: শফিকুল বারী তুহিনের জবানীতে।

আরো পড়ুন:
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র

এই চিকিৎসক বলতে থাকেন, ‘আমরা ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত একসঙ্গে পড়াশুনা করি। ১৯৯৮ এ এমবিবিএস পাস করার পর লোটে শেরিং ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চলে যায়।

সেখানে অধ্যাপক খাদেমুল ইসলামের অধীনে এফসিপিএস সার্জারী কোর্সে ভর্তি হয়। ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করে। তারপর ২০০১ কী ২০০২ সালের দিকে সে ভুটান চলে যায়।’

‘আমার সঙ্গে খুব অন্তরঙ্গতা ছিলো লোটে শেরিং’র। শহরের বাঘমারা মেডিকেল হোস্টেলে ওয়েস্ট ব্লকে সে ৮ বছর ছিলো। তাঁর বিল্ডিংয়ের পাশেই আমি থাকতাম। তাকে একবার ১৯৯২ সালের দিকে আমি ট্রেনে করে আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।

দিনে দিনেই ফিরেছিলাম। সেই ট্রেন জার্নি সে ভীষণ উপভোগ করেছিলো’ স্মৃতি হাঁতড়ে বলছিলেন বন্ধু শফিকুর বারী তুহিন। তিনি বলেন, প্রকৃতির প্রতি একটি টান ছিলো লোটে’র। আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সে অভিভূত হয়েছিলো। ব্রক্ষপুত্র নদের উচ্ছ্¦লতা তাকে মুগ্ধ করেছিলো। সেইসব স্মৃতি আজো অম্লান।’

‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ কোনদিন ভুলবে না তাকে। লং টেনিস খেলোয়াড় হিসেবেও তাঁর একটি পরিচিতি ছিলো। লং টেনিস যারা ভালো খেলতে তাদের সঙ্গে সখ্যতা ছিলো বেশি। তাকে আমরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসবে। আমরা বললে সে কথা রাখবে’ গুণের পাশাপাশি বন্ধুকে নিয়েই এমন প্রত্যাশা কলেজ জীবনের সহপাঠীর।

ভিডিও দেখুন:

‘সাধারণ বিদেশী শিক্ষার্থীরা পাস করার পর নিজেদের দেশে চলে যায়। কিন্তু লোটে শেরিং আমাদের দেশে ইন্টার্নশিপ পাস করেই সেই কাজ করেননি। এদেশেই সে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে এবং তিন বছর ট্রেনিং করে এবং এফসিপিএস সার্জারী ডিগ্রী অর্জন করে। আর এই ডিগ্রী খুব প্রেস্টিজিয়াস’ গর্বভরা কন্ঠে উচ্চারণ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা: আনোয়ার হোসেনের।

তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে লোটে শেরিং ভুটানে ফিরে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন হিসেবে ওই দেশের জনগণের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হন। তাঁর আজকের অবস্থান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের জন্য আনন্দ ও গর্বের। নিজের ২৮ তম ব্যাচে মেধার দিক থেকে প্রথম দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থীর একজন ছিলেন লোটে শেরিং।’

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভুটানে ফিরে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন লোটে শেরিং। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন জেডিডব্লিউএনআরএইচ অ্যান্ড মঙ্গার রিজিওনাল রেফারেল হসপিটালে কনসালট্যান্ট সার্জন হিসেবে। এরপর রাজনীতির পথে পা বাড়ান ২০১৩ সালের দিকে।

মাত্র ৫ বছরেই ডিএনটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করে তাঁর দল। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর এক মাসের মধ্যেই হয়তো তিনি অধিষ্ঠিত হবেন ভুটানের রাষ্ট্র ক্ষমতার সর্বোচ্চ পদে।

কালের আলো/এএম/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email