মোবাইল নেটওয়ার্ক বঞ্চিত ফটিকছড়ির প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দা
প্রকাশিতঃ 8:41 pm | July 11, 2025

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক, কালের আলো:
তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতিতে গোটা পৃথিবী যখন হাতের মুঠোয়, সে সময়ে চট্টগ্রামের দুটি উপজেলার অর্ধশত গ্রাম যেন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। ইন্টারনেট, মোবাইল ব্যাংকিং তো দূরের কথা, মোবাইল ফোনে একটা কল করতে হলেও যেতে হয় ৪-৫ কিলোমিটার দূরে।
ফটিকছড়ির পাহাড়ঘেরা উত্তরের জনপদ নয়টিলা, নলখো, সাইবেনিরখিল, ত্রিপুরাপাড়া, পশ্চিম সোনাই এবং পার্শ্ববর্তী মিরসরাইয়ের পানুয়া, কালাপানিসহ দুই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের চিত্র এমনই। গ্রামগুলোর প্রায় ৭০ হাজার মানুষ মোবাইল ফোনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উত্তর ফটিকছড়ির এ অংশে একটি মোবাইল ফোন টাওয়ার থাকলেও সাত বছর ধরে তাতে নেটওয়ার্ক সংযোগ নেই। ৪-৫ কিলোমিটার দূরের কয়লা বাজারে গেলে মেলে দুটি ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৪ সালে ফটিকছড়ির পশ্চিম সোনাই গ্রামে বন বিভাগের জমিতে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা একটি টাওয়ার স্থাপন করে। কিন্তু ২০১৮ সালে চাঁদাবাজি, নিরাপত্তা সংকট ও চুরি-ডাকাতির কারণে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই দুই উপজেলার অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা মোবাইল ফোনসংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রযুক্তিসেবা থেকে বঞ্চিত। ঘরে বসে ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ঘাঁটা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজ লেনদেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ফেসবুক-ইউটিউবে ঢুঁ মারা– এসব যেন গ্রামবাসীর কাছে স্বপ্ন। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিক্ষা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
নয়টিলা এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, আগে রবির টাওয়ার চালু ছিল, তখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে কথা বলা যেত। অন্য অনেক কাজও হতো। এখন একটা ফোন করতে হলেও ৪-৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। দূরে আমাদের আত্মীয়স্বজন কেউ মারা গেলেও আমরা ঠিক সময় খবর পাই না। মনছুর আলী নামের আরেক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, একটা ফোন করার জন্যও অনেক দূরে যেতে হয়। প্রযুক্তির এই যুগে এটা কি কল্পনা করা যায়?
নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপনের দাবিতে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষরসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। এ বিষয়ে রবি আজিয়াটার টেরিটরি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি ও বন বিভাগের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল এলাকা পরিদর্শন করেছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, জায়গাটি বন বিভাগের, তাই এখানে কোনো স্থাপনার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর এলাকা পরিদর্শন করেছে। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
কালের আলো/এসএকে