১৮ মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা: ইউএনএইচসিআর

প্রকাশিতঃ 7:24 pm | July 11, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

মিয়ানমারে চলমান সংঘাত ও রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নিপীড়নের জেরে গত ১৮ মাসে এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে, যা ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ।

শুক্রবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা— ইউএনএইচসিআর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর কক্সবাজারে মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এলাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। দেড় বছরে আগত আরও দেড় লাখ তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যা এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানের অন্যতম করে তুলেছে।

ইউএনএইচসিআর বলছে, নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে এবং আরও অনেক রোহিঙ্গা নিবন্ধন ছাড়াই জনাকীর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

নতুন আগতদের জন্য জরুরিভাবে আরও মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচসিআর বলছে, নতুন আগতরা মূলত ক্যাম্পগুলোতে আগে থেকে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্ভরশীল। কারণ বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত শরণার্থী খাদ্য, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীসহ মৌলিক পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে দাতা সংস্থাগুলো। তবে যারা নিবন্ধনের আওতায় আসেনি; তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইউএনএইচসিআর আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, বৈশ্বিক সহায়তা তহবিলে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন শরণার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরি পরিষেবা শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিগগিরই অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত না করা হলে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং প্রয়োজনীয় রান্নার জ্বালানি (এলপিজি) ফুরিয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে নতুন করে এসেছে প্রায় ৬৩ হাজার শিশু।

জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শরণার্থীরা ইতিমধ্যেই এই তহবিল সংকটের প্রভাব অনুভব করেছেন। সহায়তা বন্ধের আশঙ্কায় তাদের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগে দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু রোহিঙ্গা তাদের পরিবারের সুরক্ষা এবং আরও উন্নত জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক সমুদ্র পথে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে।

ইউএনএইচসিআর এবং এর মানবিক সহযোগীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত এবং নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

কালের আলো/এএএন