নাসার নজরুলের স্ত্রীর দুই ফ্ল্যাট জব্দ, ৫৫ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ

প্রকাশিতঃ 6:03 pm | June 18, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার পর নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্ত্রী ও গ্রুপটির পরিচালক নাসরিন ইসলামের দুইটি ফ্ল্যাট জব্দ ও ৫৫ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, নাসরিনের জব্দ হওয়া ফ্ল্যাট দুইটি মহাখালী ডিওএইচএসে, যার মূল্য ৪ কোটি টাকা। এছাড়া নাসাসহ ৫৫টি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে তার, যেগুলো অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।

তার আগে ১৩ এপ্রিল ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

এ মামলায় তার বিরুদ্ধে ২০ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সম্পদ জব্দের আবেদনে নাসরিনের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এই সম্পদ অর্জনের মামলার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার তদন্তকালে বিভিন্ন সূত্র হতে দুদক জানতে পেরেছে আসামি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ‘বিক্রি ও স্থানান্তর’ করার চেষ্টা করছেন। বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অবিলম্বে এসব সম্পদ জব্দ ও শেয়ার অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা আবশ্যক বলে মনে করেন দুদক।

ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক তার বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৪৫৪ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে।

তার আগে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ অগাস্ট এক্সিম ব্যাংকে নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি। এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ।

ব্যাংক খাতের আলোচিত নাম নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

বিএবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

এর আগে ২৫ অগাস্ট এক্সিম ব্যাংক ও বিএবির চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী নাসরিন ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ।

ব্যাংক থেকে নানা সময় চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে।

নজরুল ইসলাম মজুমদার, তার স্ত্রী নাসরিন ইসলাম, মেয়ে আনিকা ইসলাম, ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরসহ মোট ৫২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে গত ৪ ফেব্রুয়ারি।

এছাড়া পোশাক রপ্তানির আড়ালে ‘মানিলন্ডারিং’এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

কালের আলো/এমডিএইচ