আদালতে বিচারপ্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 12:48 pm | April 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আদালতে বিচার চাইতে গিয়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায় বিচার পাক। বিচার না পেয়ে আমরা যেমন কেঁদেছি এমন যেন আর কেউ না কাঁদে। গণতন্ত্র না থাকলে যেমন আইনের শাসন সুষ্ঠু হয় না তেমনি আইন না থাকলে গণতন্ত্র সু্প্রতিষ্ঠিত হয় না।’

রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসিডে দগ্ধ, প্রতিবন্ধী, সহায় সম্বলহীন যারা বিচার পেতে অক্ষম তাদেরকে সরকারি সহায়তায় আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন আদালতে সুষ্ঠু বিচার পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যেন সুষ্ঠু আইন সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু জেলা নয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে আইনি সহায়তা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা এজন্য প্রতিটি জেলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা অফিস স্থাপনাসহ সেখানে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘মামলাজট থেকে মুক্তি পেতে আপসযোগ্য মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়া মানুষ এর সহায়তা পাবে। আমরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সাভির্সও চালু করেছি। এজন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কীভাবে অফিসাররা কাজ করবে। অনেককেই আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অনেক মামলা নিষ্পত্তিও হয়েছে। ’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সমাজের উচ্চবিত্তদের মধ্যে বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা বেশি বলে জানান। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে মেয়েদের সম্পত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তাদেরকে সম্পত্তির ভাগ দিতে চান না। অনেক ভাইয়েরা তাদের বোনকে সম্পত্তির ভাগ দেন না। এটি শুধু নিম্নবিত্ত নয় উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রেও ঘটে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

এ ক্ষেত্রে যারা সাবেক বিচারপতি আছেন আমি তাদের অনুরোধ করবো, যে সম্পত্তির ওপর মেয়েদের অধিকার রয়েছে সেটুকু যেন তাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে না পারে এর একটি সুরাহা বের করতে। সন্তান ছেলে হোক, মেয়ে হোক তার সম্পত্তির ভাগ যেন সে পায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসসমূহ ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র কেন্দ্রস্থল হিসেবে মামলার পক্ষসমূহের মধ্যে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করছে, যা সারাদেশের আদালতসমূহে মামলাজট হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। ’৭৫ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হত্যা, দমন, নির্যাতন ও নিপীড়নের রাজত্ব কায়েম করে। সুবিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। দেশের জনগণ আইনগত সহায়তা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।’

শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেন। তিনি তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করতে পারতেন। জনসাধারণের অধিকারের কথা বিবেচনা করেই সাধারণ আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এনএল/এমএইচএ