মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী টেস্টে রেকর্ড গড়া জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিতঃ 8:10 pm | July 11, 2021

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলোঃ

হারারে টেস্টে অপেক্ষা করছিল শেষ দিনের রোমাঞ্চ। লড়াইটা উত্তেজনা ছড়াতে পারতো। সেটা আর হলো না। সফরের একমাত্র টেস্টটিতে পঞ্চম দিনে স্বাগতিক দল প্রতিরোধ গড়লেও ২২০ রানের বড় জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য ছিল ৪৭৭ রানের। জিততে হলে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হতো। বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনা কার্যত ছিল না, তবে হারারের উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে থাকায় ড্র করার চেষ্টা ছিল জিম্বাবুয়ের।

এর আগে জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপর্যয়ে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪৬৮ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা।

সপ্তম উইকেটে লিটন দাসের সঙ্গে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর নবম উইকেটে পেস বোলার তাসকিন আহমেদের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯১ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন রিয়াদ।

৪১৩ মিনিট ব্যাটিং করে ১৭টি চার ও একটি ছক্কায় টেস্ট ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫ রান করেন লিটন। ৭৫ রান করেন তাসকিন আর ৭০ রান করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ।

রোববার ( ১১ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাবে খেলতে নামা বাংলাদেশ বোলারদের দাপটে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধে করতে পারেনি স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে চতুর্থদিন ১৪০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটি এদিন দ্রুত আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে বসে। মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ও তাসকিন আহমেদের তোপে কেউই টিকতে পারেনি।

আগেরদিনের অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া ডিওন মায়ার্স মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে ২৬ রান করেন। তবে পঞ্চম দিন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ডোনাল্ড টিরিপানো। ভিক্টর নিয়াচি ও ব্লেসিং মুজারবানির সঙ্গে দুটি দারুণ জুটি উপহার দিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমান। অবশেষে তাকে তুলে নেন এবাদত হোসেন। ১৪৪ বলে ৬টি চারে ৫২ রান করেন তিনি। শেষ অবধি ২৫৬ রানে থামে দলটির দ্বিতীয় ইনিংস।

এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে অভিষেক সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে ৫ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় লিটন দাসকে। এই ফরম্যাটে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ৯৫ রানে আউট হন তিনি। শেষদিকে অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৭৫ রান করেন রাসকিন। লিটন না পারলেও বাজিমাত করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর টেস্ট দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবারের জিম্বাবুয়ে সফরের আগে হঠাৎ করেই ডাক পড়ে তার টেস্ট দলে।

দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের ইনজুরির শঙ্কায় তাকে শেষদিকে দলে নেয় নির্বাচকরা। এরপর একাদশেও সুযোগ আসে। সেটি কাজে লাগাতে ভুল করেননি ৩৫ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার, নিজের পঞ্চাশ তম টেস্ট খেলতে নেমে ক্যারিয়ার সেরা দেড়শ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি। এই ম্যাচ খেলেই অবশ্য সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দেড়শ রানের সৌজন্যে স্কোর বোর্ডে ৪৬৮ রান তোলে টাইগাররা।

পরে জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামলে মিরাজ ও সাকিবের ঘূর্ণির সামনে সুবিধা করতে পারেনি। স্বাগতিকদের ইনিংস থামে ২৭৬ রানে। এতে ১৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল। পরে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পান সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। ওপেনার সাইফ হাসান ৪৩ রান করে আউট হলেও দমানো যায়নি সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। দীর্ঘদিন ধরেই রান খরায় ভুগছিলেন দুজন।

সুযোগ কাজে লাগিয়ে সপ্তম টেস্ট খেলতে নেমে নিজের অভিষেক সেঞ্চুরি তুলে নেন সাদমান, অপরাজিত থাকেন ১১৫ রানে। টেস্টে নিজের দ্বিতীয় শতকের স্বাদ পাওয়া শান্ত অপরাজিত থাকেন ১১৭ রানে। এতে ১৮৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। আগের ইনিংসের লিড মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৭৭ রানের। এই রান টপকানোরে জন্য প্রায় সাড়ে চার সেশন বা ১৩০ ওভারের মতো সময় পায় জিম্বাবুয়ে।

রীতিমতো অসম্ভব এই টার্গেট টপকাতে নেমে ব্যক্তিগত ১১ রানেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার মিল্টন শুম্বা। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন টেলর। তুলে নেন এই ফরম্যাটে নিজের ১২তম ফিফটি। পরে অবশ্য টেলর ঝড় থামান মিরাজ, টেলর আউট হন ৯২ রান করে। ম্যাচের শেষদিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট। প্রথম সেশনে তাসকিন-মিরাজরা ৪ উইকেট তুলে নিলেও পথ আগলে দাঁড়ান ডোনাল্ড ত্রিপানো। খেলেন ৫২ রানের ইনিংস।

এতে অবশ্য জয় আটকানো যায়নি টাইগারদের। পরে খানিক সময় লাগলেও জিম্বাবুয়েকে ২৫৬ রানে আটকে ফেলে সফরকারীরা। এতে প্রথম এবং একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পক্ষে এ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪টি করে উইকেট পান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল