বন কর্মকর্তার কাছে নেই বৈধ-অবৈধ ‘স’ মিলের কোন তালিকা

প্রকাশিতঃ 7:04 pm | July 22, 2025

মোঃ শামসুল আলম খান, কালের আলো:

সরকারের সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে লাইসেন্স ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় ময়মনসিংহে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ স’মিল (করাত কল)। তবে ময়মনসিংহ জেলায় বৈধ ও অবৈধ স’ মিলের কোন তালিকা নেই বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দ্রুত এসব ‘স’ মিলের তালিকা করছি। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে কোন অভিযান নেয়া হয়নি, তাই এর কোন তালিকাও করা হয়নি।

এদিকে, নিয়ম নীতি ও লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র অবৈধ স’মিল গড়ে উঠায় একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারি মিল মালিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক উৎকোচ আদায় করে। এতে করে লাভবান হয় ওই কর্মকর্তা কর্মচারি ও মিল মালিকরা। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব তহবিলের খাতা শুণ্যই থেকে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, এসব মিলের ফড়িয়া দালালরা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে সব ধরণের গাছ বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করছে। অনেক মিলে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কাঠ ও বন বিভাগের কাঠ চিড়াই করা হয়। এতে করে একদিকে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নাগরিক জানান, একটি স’মিলের লাইসেন্স করতে বেশ কয়েকটি কাগজপত্র এবং দুই হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। তবে অবৈধ ‘স’ মিলগুলো বন বিভাগের কর্তারা ‘টু-পাইস’ ধান্দা করে জনবল সঙ্কট দেখিয়ে মিল তদারকি যুগের পর যুগ বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি মনে করেন, অবৈধ মিল মালিকদের বড় ধরনের জরিমানা বা মিল সিলগালা করলে তারা লাইসেন্স করতে বাধ্য হতো ও সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেত।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একাধিক মিল মালিকের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল স’মিলের লাইসেন্স কেনো করছেন না? এ ব্যাপারে তারা কোনো জবাব দিতে রাজি হন নি। শুধু এটুকু জানান, লাইসেন্স করতে গেলে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা মোঃ সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, অবৈধ ‘স’ মিল মালিকদের নোটিশ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এসব অবৈধ ‘স’ মিলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে স’ মিলের পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য যদি আবেদন করা হয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী অবস্থান ও কাগজপত্র ঠিক থাকলে আমরা ছাড়পত্র প্রদান করে থাকি। আর অবৈধ স মিলের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, স মিলের লাইসেন্স করানোর জন্য আমরা মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু মিল মালিকরা নানা ধরণের টালবাহানা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসের নানান ধরনের হয়রানির অভিযোগ করেন। আমরা ময়মনসিংহ জেলার সকল স মিলের তালিকা করছি‌। মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। অচিরেই জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ‘স’ মিল মালিকদেরকে লাইসেন্স করাতে বাধ্য করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরোও বলেন, অবৈধ কতগুলো স’ মিল রয়েছে এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না, তবে আমরা তালিকা করছি।মিল মালিকদের কাছ থেকে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যদি উৎকোচ নিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার বলেন, অবৈধ স’ মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে স’ মিল চালানোর কোন সুযোগ নেই। স’ মিল চালালে অবশ্যই তাদের লাইসেন্স থাকতে হবে।

কালের আলো/এমএসএকে