বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে ‘গুজবের মহামারি’; সার্বভৌমত্বের স্তম্ভকে ‘দুর্বল’ না করার অনুরোধ ‘বাকরুদ্ধ’ বিমান বাহিনী প্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:21 pm | July 22, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
হুট করে যেন আকাশ থেকে আগুন নামলো। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ল একটি যুদ্ধবিমান। চীনে তৈরি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিওয়ান বিমান বিধ্বস্তে স্কুলটাই যেন পরিণত হলো এক অজানা যুদ্ধক্ষেত্রে। স্কুলে মাঠে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানটি ছেঁচড়ে গিয়ে ধাক্কা খায় দোতলা একটি অ্যাকাডেমিক ভবনে। অগ্নিগোলকে পরিণত হওয়া সেই বিমানের শিখা স্কুল ভবনটিকেও গ্রাস করে নেয় সহজেই। মর্মান্তিক, মর্মন্তুদ ও বিভীষিকাময় এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু ও ১৬৫ জনের আহতের খবর জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
নিহত ও দগ্ধের সংখ্যা বিবেচনায় দেশের ইতিহাসে অন্যতম এ বড় বিমান দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ পুরো দেশ। একই সঙ্গে শুরু হয় গুজবের মহামারি। বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিওয়ান বিমানের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘লাশ লুকানোর গুজব’। ‘এফটি-৭ বিজিওয়ান’ মডেলের জঙ্গিবিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে বহু হতাহতের ঘটনায় পর সবার মতোই হৃদয় ভেঙে গেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনেরও। মাইলস্টোনে বিমান আছড়ে পড়ার সময় সরকারি সময়ে তুরস্কের পথে ছিলেন তিনি। ঘটনা শোনার পর ‘বাকরুদ্ধ’ বিমান বাহিনী প্রধান সফর বাতিল করে তুরস্কের বিমানবন্দর থেকেই দেশে ফিরে আসেন। ঢাকায় পৌঁছেই তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি আহতদের চিকিৎসা এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
পরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বীর উত্তম এ কে খন্দকার বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের ‘ফিউনারেল প্যারেড’ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে শোকার্ত হৃদয় নিয়েই কথা বলেন দেশে ইউনিফর্ম পরা সিনিয়র মোস্ট এই এয়ারম্যান। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বোবা কান্নার পাষাণ ভারে স্তব্ধ হয়েই বলছিলেন- ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আপনাদের সবার মত আমারও হৃদয় ভেঙে গেছে। আপনারা জানেন, মাত্রই আমি সরকারি সফরে বেরিয়েছিলাম, জরুরি সফর ছিল, আমি ওই বিমানবন্দর থেকেই আমি আজকে ফিরে আসছি সকালে। যখন সংবাদ পেয়েছি, বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।’
বিপদের এই সময় স্যোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গুজব ও মিস ইনফরমেশনে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বিনয়াবনত কণ্ঠে তিনি উচ্চারণ করেন-‘একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। দয়া করে গুজব ছড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের স্তম্ভ দুর্বল করে দেবেন না।’ বৈমানিকের মৃত্যু ও জঙ্গি বিমানটি গুঁড়িয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার কারণ জানতে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এরই মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে জানালেন-‘শিগগির তদন্ত কমিটি বের করবে, কী ধরনের ত্রুটি ছিল।’ সরকারের পাশাপাশি বিমানবাহিনীও সবসময় হতাহতদের পাশে থাকবে-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।’
- তদন্তে ‘সময় লাগবে’, ‘ধৈর্য্য’ ধরার আহ্বান
- বহরে থাকা জঙ্গি বিমানগুলোর ‘লাইফটাইম’ পার হয়নি, রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ‘ছাড় দেয় না’ বিমান বাহিনী
- এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ
- সব রকমের গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেশবাসীকে
- আহতদের দেখতে হাসপাতালে বিমান বাহিনী প্রধান
বহরে থাকা জঙ্গি বিমানগুলোর ‘লাইফটাইম’ পার হয়নি, রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ‘ছাড় দেয় না’ বিমান বাহিনী
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের ‘ফিউনারেল প্যারেড’ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিমান বাহিনী প্রধান। কোন প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি। টু দ্য পয়েন্টে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুজবের বিষয়টি পরিস্কার করেছেন। দুর্ঘটনায় পড়া ‘এফটি-৭ বিজিওয়ান’ যুদ্ধবিমানটি পুরনো হয়ে গিয়েছিল, এই সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়েছেন ‘বিমান বাহিনীর বহরে থাকা জঙ্গি বিমানগুলোর বয়স বেশি হলেও ‘লাইফটাইম’ পার হয়ে যায়নি। আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ‘ছাড় দেয় না’ বিমান বাহিনী।’ বিমান বাহিনী প্রধান বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বিমান সাধারণত সহজে পুরাতন হয় না। প্রত্যেকটা বিমানেরই একটা ‘লাইফটাইম’ আছে। সুতরাং এই বিমানগুলোর প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত লাইফটাইম আছে। এক যুগ, দুই যুগ কোনো ব্যাপার না, ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা এটাকে ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি কি-না? আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা আমাদের বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে কোনো কম্প্রোমাইজ করি না। কেননা, যে দেশ থেকে বিমান কিনি সেদেশ থেকে আমরা রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত প্রযুক্তি এবং দরকার হলে যা যা প্রয়োজন হয়, সেটাও আমরা তাদের সাথে চুক্তি করে নিই। সুতরাং আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ সব ভালো হয় বিমানের, ইঞ্জিনের।’
প্রযুক্তিগতভাবে এই বিমানগুলো পুরনো হলেও বিমান পুরনো হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একটা কথা বলতে পারি, প্রযুক্তিগতভাবে এই বিমানগুলো পুরোনো হয়েছে, এই বিমান পুরোনো না, প্রযুক্তিগতভাবে পুরোনো। নতুন প্রযুক্তির বিমানের জন্য অবশ্যই আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা সবাই জানেন, আমরা ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তির বিমান আনব। তার মানে, এই না যে, ওইটা অ্যাক্সিডেন্ট হবে না। হইতেই পারে, সেটা হচ্ছে আসল কথা। কিন্তু এই বিমানগুলো আমরা যথাসম্ভব ভালোভাবে মেরামত করি, দেশে-বিদেশে সব জায়গায় আমরা এগুলোকে যা যা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়, সেগুলো করি।’
এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ
এ ধরনের বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ‘প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা তুলে ধরে হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা তৈরি আছে। সারা বিশ্বে যেভাবে হয়, আমরাও সেভাবে করে চলেছি। তারপরও দুর্ঘটনা হয়। আপনি উন্নত বিশ্বেও দেখবেন, বড় বড় অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান আছে, সেগুলোও দুর্ঘটনায় পতিত হয়। কিছুদিন আগে এফ-৩৫ জঙ্গি বিমানও দুর্ঘটনায় উপনীত হয়েছে। তো, সেটাতো আর কেউ গ্যারান্টি দেবে না। আমরা অবশ্যই এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেব, ভবিষ্যতে সেটা প্রতিকার করব ইনশাআল্লাহ।’
বিমানের ইঞ্জিনের অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‘গুজবে’ বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়ে বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘গুজব বিশ্বাস করবেন না, এটা আমার সবার প্রতি অনুরোধ। ইঞ্জিনেও আমরা অনেক বেশি কেয়ারফুল। কেননা আমার একজন পাইলটের একটাই ইঞ্জিন। সো, আমরা ইঞ্জিন নিয়ে কখনও কম্প্রোমাইজ করি না। এটা প্রযুক্তিগতভাবে পুরোনো। কিন্তু এই ইঞ্জিনের যত ঘণ্টা থাকার কথা, তার এক ঘণ্টাও বেশি ফ্লাই করি না। এবং এটা যা যা মেরামত করার কথা, আমরা সম্পূর্ণভাবে করি। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের মনে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু বিকল যখন হবে, সেটা বলে কয়ে হয় না, সেটা কখন হবে, আমরা সেটা বলতে পারি না। আমরা কম্প্রোমাইজ করেছি-এমন কোনো সন্দেহ আমার মনে নাই।’
তদন্তে ‘সময় লাগবে’, ‘ধৈর্য্য’ ধরার আহ্বান
জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মৃত্যু ও বিমান দুর্ঘটনার কারণ জানতে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন বিমান বাহিনী প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে দেশে ইউনিফর্ম পরা সিনিয়র মোস্ট এয়ারম্যান। তারপরও আমার নিজস্ব কোনো ধারণা এখন বলা উচিত হবে না। তবে অবশ্যই এটা একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিমান- আমাদের এই ইঞ্জিনের অনেক টেকনিক্যাল প্রবলেম হতে পারে, পাখির আঘাত হতে পারে, অন্য কিছু হতে পারে-শেষ মুহূর্তে এত কম সময় ছিল- অনেক কিছু বলতে পারতাম, যদি বিমানটা অক্ষত থাকত অথবা পাইলট আমাদের সাথে থাকত-কিন্তু এই দুজনের একটাও নাই আমাদের কাছে।’
তদন্ত করতে ‘একটু সময় লাগবে’ জানিয়ে সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানানও হাসান মাহমুদ খাঁন। তাঁর ধারণা, স্কুলের খালি মাঠে ‘নামানোর চেষ্টা’ করার কারণে পাইলট তৌকির ইসলাম বিমান থেকে অক্ষত অবস্থায় বের হওয়ার সুযোগ পাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিমানটা যখন পাইলটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন সে সর্বোপরি চেষ্টা করেছে বিমানটাকে একটা খালি জায়গায়, বিশেষ করে ওই মাঠটায় গিয়েছিল, যেখানে সে নামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি বলব। কারণ বিমানটা আছড়ে পড়েছিল বিল্ডিংয়ের উপরে। কিন্তু সে সেই নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য, বিমানটাকে দিক-নির্দেশনায় যাওয়ার জন্য যে মূল্যবান সময় দিয়েছে, তার জন্য তার যে ইজেকশন বলি আমরা, বিমান থেকে বের হওয়ার যে পদ্ধতি আমাদের, সেটা বিলম্বিত হয়ে যায় এবং তার ফলে সে তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে বা সে আজ আমাদের মাঝে নাই।’
সব রকমের গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেশবাসীকে
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘লাশ লুকানোর গুজব’ও দেশবাসীকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি বলেন, ‘ক্র্যাশ সাইটে এক ধরনের অশান্তি বিরাজ, এটা খুবই দুঃখজনক। অনেক গুজব চলছে, এই গুজবে কান দেবেন না। যখন আমাদের কাছে যে আপডেট আসছে, আহত-নিহতের, সেটা আমরা সাথে সাথে আইএসপিআরের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি। এখানে লুকানোর বা গোপন করার কোনো বিষয়ই নাই। কার কাছ থেকে লুকাব? আপনারা আমাদের দেশের মানুষ, আমরাও এই দেশের মানুষ। দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনাই। আমরা চেষ্টা করছি, এটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বিমানবাহিনীও সবসময় হতাহতদের পাশে থাকবে এবং থাকছে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয়, আমরা সবকিছু করব।’ উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বিমান বাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘গতকালই আমরা উচ্চ পর্যায়ের একটা তদন্ত দল গঠন করে দিয়েছি। তারা অতি শিগগির এই তদন্ত করে বের করবে যে, কী ঘটনা ঘটেছিল এবং তার প্রেক্ষিতে যদি কোনো ভুলত্রুটি থেকে থাকে, আমরা ভবিষ্যতে তার অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে (গণমাধ্যম) দেশবাসীকে একটা বিশেষ অনুরোধ করতে চাই, সেটা খুব জরুরি আমার জন্য, আপনাদের মাধ্যমে বলা, সেটা হচ্ছে- দয়া করে আপনারা দেশের এই বিপদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব, ভুল তথ্যে কান দেবেন না। একটা শক্তিশালী বিমান বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। দয়া করে, গুজব ছড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের এই স্তম্ভকে দুর্বল করে দেবেন না।’ তিনি বলেন, ‘যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে, সেটা রিকভার করাই হবে আমাদের মূল কাজ। যদিও জানি, এটা কোনোভাবেই আমরা সম্ভব করতে পারব না। তবে আমি যেটা বলেছি বারবার, আমরা তাদের পাশে থাকব। আমরা সম্মিলিতভাবে অনেকেরই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।’ বিমান বাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসা, এটাই আমার মনে হয় এখন সবচেয়ে জরুরি, যারা আমাদের মাঝে এখনও অসুস্থ হয়ে আছেন, বা আহত হয়ে আছেন, তাদেরকে আমরা সর্বাত্মক চিকিৎসা প্রদান করবো এবং তারা যাতে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
আহতদের দেখতে হাসপাতালে বিমান বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা
তুরস্ক সফর বাতিল করে সেখানকার বিমানবন্দর থেকেই ঢাকায় ফিরে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রথমেই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি আহতদের চিকিৎসা এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে বলেন, ‘সরকার আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরণের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আহতদের দ্রুত ও মানসম্পন্ন সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দিকনিদের্শনা অনুসারে যা যা করণীয়, বিমান বাহিনী অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতঃ সবকিছু করবে।’ বিমান বাহিনী প্রধান মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন,‘এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আমরা যে মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছি, তা কখনো পূরণ হবার নয়। আমি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং সর্বদা নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি’ এমনটিই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আইএসপিআর।
কালের আলো/এমএএএমকে