ফেনীর বন্যা: কমেছে বৃষ্টি ও নদীর পানি, ভোগান্তিতে দুর্গতরা
প্রকাশিতঃ 2:21 pm | July 11, 2025

ফেনী প্রতিবেদক, কালের আলো:
ফেনীতে বৃষ্টি ও নদীর পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজীর বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তলিয়ে গেছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম। ফলে চার উপজেলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। দুর্গত এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি কমে আসায় নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্গত এলাকাবাসীর পাশে থেকে মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত পানির প্রবাহ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত সোমবার থেকে ভারী বর্ষণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়ায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে যায়। এতে করে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করায় সকাল থেকে পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। তবে বন্যার পানি নিম্নাঞ্চল ফুলগাজী গড়িয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় ঢুকতে শুরু করে।
ফুলগাজীর দৌলতপুর এলাকার বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘গেল বছরের বন্যার বছর না ঘুরতে আবারও পানিতে ডুবতে হয়েছে। সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখানে জন্মগ্রহণ করে ভুল করেছি।’
উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, ‘বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গেল বছরের বন্যার মতো এবারও বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।’
গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পিতা রানি বলেন, ‘ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। নিরাপদ পানির সংকটে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তারা দায়সারা কাজের জন্য প্রতিবছর এ জনপদে ভাঙন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একমাত্র টেকসই বাঁধই সমাধান।’
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টিপাত কমছে। আজ শুক্রবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘মুহুরী নদীর পানি ১ দশমিক ৯৩ মিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলগাজী এলাকার বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে পানির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই।’
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্য কবলিত চার উপজেলার মধ্যে পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ফুলগাজীতেও কিছুটা ভালোর দিকে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২০ হাজারের বেশি বন্যা কবলিতদের মাঝে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।’
কালের আলো/এএএন