অবশেষে মুখ খুলেছে ইউআইইউ ট্রাস্টি বোর্ড, কঠোর বার্তা শিক্ষার্থীদের
প্রকাশিতঃ 2:49 pm | May 18, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
চলমান সংকটের মধ্যেই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ড।
রোববার (১৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই চিঠিতে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীদের আগামী ২৬ মের মধ্যে ভর্তি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আবেদন করলে শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টারে পরিশোধ করা টিউশন ফির সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে ইউআইইউর ট্রাস্টি বোর্ড বলেছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন, তারা ভর্তি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সুযোগ পাবেন। ২৬ মের মধ্যে আবেদন করলে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল রাতে উপাচার্য ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আটকে রাখার ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করতে প্রক্টরিয়াল তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হতে পারে, যার মধ্যে বহিষ্কারও থাকতে পারে। তবে অভিযুক্ত কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন, তাহলে তিনি এই শাস্তির আওতায় পড়বেন না।
ট্রাস্টি বোর্ড দাবি করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা, একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক নীতিমালায় কোনো গোপনীয়তা নেই। ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা এসব তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকেন
বোর্ড আরও বলেছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষার মানে সন্তুষ্ট। তবে একটি ছোট অংশ একাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করছে, যা আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়, ২০০৩ সালে ইউনাইটেড গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত ইউআইইউ ‘গুণগত শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষ’ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ইউনাইটেড গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও ছাত্রকল্যাণ ফান্ডে প্রতি বছর আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউআইইউ ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চকে (আইএআর) প্রতি বছর দুই কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে মোট দশ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাস্টি বোর্ড স্পষ্ট করে জানিয়েছে, আমরা কোনোভাবেই ইউআইইউর একাডেমিক মান রক্ষায় আপস করব না। আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের পথে কোনো বাধা মেনে নেব না।
ভর্তি বাতিল করতে আগ্রহীদের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে ই-মেইলের (admission_cancellation@uiu.ac.bd) মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ই-মেইলে ওই ফর্ম পাঠিয়েছে বলেও জানানো হয়।
চিঠির শেষাংশে ট্রাস্টি বোর্ড সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেছে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়াসে অবিচল থাকব এবং কোনো অরাজকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।
গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) উপাচার্যসহ ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তার একযোগে পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ‘ইউআইইউ রিফর্ম’ নামে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পটভূমিতে গত ২৬ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কাশেম মিয়া তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকরাও প্রশাসনিক পদ ত্যাগ করেন। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তী সময়ে ২৮ এপ্রিল ট্রাস্টি বোর্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তদন্ত অগ্রগতির কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
কালের আলো/এসএকে