অনিরাপদ পানিতে বাহারি শরবত
প্রকাশিতঃ 4:39 pm | May 13, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না মানুষ। তাই তারা স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছে ফুটপাতের শরবতে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরবতের চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কেও গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে এসব দোকানে বেশি ভিড় করছে রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা।
উন্মুক্ত স্থানে, ধুলায় আচ্ছন্ন রাস্তায় নোংরা পরিবেশে উন্মুক্তভাবে বিভিন্ন ফল সাজিয়ে রাখা হয়। এগুলো দিয়েই তৈরি হয় ফলের শরবত। সাজিয়ে রাখা খোলা বেলে ধুলোময়লা যাচ্ছে, সেটা দিয়ে শরবত বানান কেন—জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, এগুলো স্যাম্পল। এগুলো দিয়ে শরবত বানাই না। কিছুক্ষণ পরে তাকে ওই বেল দিয়েই শরবত বানাতে দেখা যায়।
রাজধানীর মিরপুর, গুলিস্তান, পল্টন ও স্টেডিয়াম এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিভিন্ন রং-বেরঙের ও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের শরবত বিক্রি হচ্ছে পুরোদমে। তাপমাত্রা যত বাড়ছে ততোই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই পান করছে রাস্তার পাশের শরবত। এসব দোকানে লেবুর শরবত প্রতি গ্লাস ১০ টাকা, প্যাকেটজাত ফ্লেভার দিয়ে বানানো ৫০০ মিলি লিটার বোতলের শরবত ২০ টাকা, বেলের শরবত প্রতি গ্লাস ২০ টাকা ও তোকমাসহ বিভিন্ন ফল দিয়ে বানানো শরবত প্রতি গ্লাস ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর মিরপুর এলাকায় ছোট বোন ও ছোট বোনের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছিলেন জুলহাস ইসলাম। গরমে তৃষ্ণার্ত হয়ে রাস্তার পাশের বিক্রি করা আখের রস খেয়েছেন তারা। তিনি বলেন, এতো গরম সহ্য করা যায় না। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল, তাই আমরা আখের রস খেলাম। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু আখের ওপর মাছিসহ ধূলোবালি রয়েছে এটাতো ক্ষতিকর, এমনটা বললে তিনি বলেন, আমরা তো আর প্রতিদিন খাই না। এক দুই দিন খেলে কিছু হয় না।
লেবুর শরবত পান করছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। যতই ঠান্ডা পানি পান করি কোনও কাজ হচ্ছে না।’ কিন্তু এসব শরবত স্বাস্থ্যসম্মত নয়, জানতে চাইলে বলেন, ‘বাইরের শরবত অস্বাস্থ্যকর ও ধুলাবালুযুক্ত, এটা জানি। কিন্তু তৃষ্ণা মেটাতে সহজলভ্য এই শরবতের বিকল্প কিছু নেই।’
ফুটপাতের মুখরোচক শরবতের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ফুটপাতের শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এগুলো থেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন: টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস এসব হতে পারে। ফুটপাতে শরবত পানের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি বহন করাই সবচেয়ে ভালো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীর থেকে ঘাম আকারে পানি বের হয়ে যায়, ফলে তীব্র পিপাসা পায়। এসময় পথচারী বা রাস্তায় যারা কাজ করেন তারা রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের শরবত বা লেবুর শরবত বা পানীয় পান করে থাকেন। এই পানীয় গ্রহণ করার প্রথম বিপদ হচ্ছে এই শরবতগুলো যে পানি দ্বারা তৈরি করে সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে অনিরাপদ পানি। এই অনিরাপদ পানি বা বরফ দিয়ে বানানো শরবতগুলো খাওয়ার ফলে পানি বাহিত রোগ যেমন টাইফয়েড,জন্ডিস, হেপাটাইটিসের মতো রোগগুলো ছড়াতে থাকে। এছাড়া ফুড পয়জনিং, বমিও হতে পারে। গরমের সময় ঢাকায় কিন্তু এই অসুখ বেড়ে যায়।
কালের আলো/এমএএইচএন