মির্জা আব্বাসকে নিয়ে মওকাসন্ধানীদের অসৎ প্রচারণার নেপথ্যে

প্রকাশিতঃ 4:01 pm | April 14, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দুই মামলায় খালাস পেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে অঝোরে কেঁদেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সেদিন তিনি বলেছেন, ‘১৭ বছরে আমার জীবনে সমস্ত কিছু এই আওয়ামী সরকার কেড়ে নিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে।’ আমার পরিবারটাও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’ ওইদিন তার কান্না স্পর্শ করেছিল আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সবাইকে। তিনি বলেছিলেন- ‘১৭ বছরে একটা মানুষের জীবনে যে প্রাইম টাইম আজকে আমার বয়স ৭৪ বছর। এই ১৭ বছরে আমার জীবনে সমস্ত কিছু এই আওয়ামী সরকার কেড়ে নিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি না শুধু, আমার মতো বাংলাদেশের বহু নেতাকর্মীর জীবন শেষ করে দিয়েছে।’

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চাতুর্য ভরপুর চটকদার স্লোগানে টার্গেট করা হচ্ছে একজন মির্জা আব্বাসকে। বিকৃত নোংরা তথ্য প্রচার আর মিথ্যাচারের কী জঘন্য নমুনা! অথচ আনন্দের আতিশয্যে কী আটখানা ভাব অপপ্রচারকারীদের। কখনও ঢাকা ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে মহল বিশেষের কারসাজিতে কলঙ্ক তিলক লেপ্টে দেওয়ার প্রবণতা। আবার কখনও
তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদ, ব্যক্তিগত জীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সামনে আনা হয়েছে। মূলত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে বিতর্কিত করতেই প্রশ্নবিদ্ধ অপতৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছে। একশ্রেণির মওকাসন্ধানীদের জঘন্য ও উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত এমন অপপ্রচারে যারপরেনাই ঘৃণা-ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দলটির কেন্দ্র থেকে প্রান্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দেশের বুদ্ধিজীবী মহল, নেটিজেন বা তারুণ্যের মাঝে। গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের প্রখর পর্যবেক্ষণ শক্তিতেই ‘ময়না তদন্ত’ করেছেন এসব বিষয়ের।

দেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাবেক মন্ত্রী এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস। তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন। এখন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র অন্যতম সদস্য। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দলে যোগ দেন তিনি। চলমান রাজনীতি, আন্দোলন কর্মসূচি এবং সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে সব সময়ই সরব রয়েছেন হাসিনা পতন আন্দোলনে বারবার অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটানো এই বর্ষীয়াণ রাজনীতিক।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী দেশবরেণ্য রাজনীতিক মির্জা আব্বাস বরাবরই অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তা নস্যাৎ করার জন্য দলের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে নানা অপকর্মের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যেসব অপকর্মের গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এগুলো রোধ করতে সরকারের বিশেষ বাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। দিন দিন দলের বিরুদ্ধে গুজবের তীব্রতা বাড়ছে। নির্বাচন যত পেছাবে, এগুলো আরও বাড়বে। এতে আখেরে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোই লাভবান হবে। এ জন্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে, চক্রান্ত হচ্ছে।’

মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে তিলকে তাল বানানো বা ফুলানো-ফাঁপানো চক্রটি তাকে নিয়ে অসৎ প্রচারণা তত্ত্বের সেঁকোবিষ গেলাতে সম্প্রতি হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন! কোন কোন বিশেষ মহলকে বেনিফিশিয়ারী করতেই নানা কায়দা কানুনে নিজেদের অপপ্রচারের উর্বর মস্তিষ্ক দিয়ে শব্দ বোমায় অভিঘাত করতে হীন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই অসৎ উদ্দেশ্যকে প্যারোডি করে কেউ কেউ এখন বলতে শুরু করেছেন-‘কত কেরামতি জানো রে বান্দা, কত কেরামতি জানো!’

ঢাকা ব্যাংকে নিজের মালিকানার বিষয়ে সরাসরি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। একটি অনলাইন টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ঢাকা ব্যাংক প্রতিষ্ঠাদের মধ্যে আমি একজন। ঢাকা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২০জনকে নিয়ে। একক ব্যাক্তি মালিক না। কোন ব্যাংকেই একক মালিক থাকে না। একটা ব্যাংকে ৪৬ পার্সেন্ট শেয়ার থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের। তার মধ্যে আমার পরিবারের শেয়ার ছিল ১০ পার্সেন্ট। আর যে সময় ব্যাংকটা হয়েছে সেসময় এতো টাকা লাগতো না। আমরা অত্যন্ত অল্প টাকায় ব্যাংকটি করেছি।’

রাজধানীর শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের সাত পুরুষের বসবাস। তিনি যেখানে থাকেন সেটি রেলওয়ের জমি নয় মোটেও। কিন্তু তাকে নিয়ে এমন তথ্য প্রমাণহীন পূূর্ণ মিথ্যাচারের চিত্রায়ন যেন ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’ প্রবচনেরই সমার্থক। এ বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শাহজাহানপুরে আমি যেখানে থাকি সেটি আমাদের সাত পুরুষের বসতভিটা। এটি রেলওয়ের জমি নয়। বরং রেলওয়ে আমাদের প্রায় এক থেকে দেড়শ বিঘা অধিগ্রহণ করেছে। তো এর মধ্যে আমার আত্নীয়স্বাজন আছে, আমাদের নিজস্ব জমি আছে, আমার দাদার জমি আছে। বসতভিটার জমি যেহেতু অধিগ্রহণ করা যায় না তাই ওই সময় তৎকালীন সরকার আমাকে এটি ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এখানে বসবাস করছি। আমি যেখানে বসে কথা বলছি সেটি শহীদবাগ। এটি আমার চাচার নামে। মির্জা আব্দুস শহীদ আমার চাচার নাম। আমরা অন্যের জমি দখল করে আছি এটি একটি বিভ্রান্তকর কথা। মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়া।’

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্বাস একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ মাতৃকার জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও অগ্রহণযোগ্য ও যুক্তিহীন তথ্যে তাকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ওই গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন করেন এমন- ‘১৯৭৪ সালের তখন তো আপনি যুবক। তার মানে আপনি ১৯৭১ সাল দেখেছেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আপন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার কোন একজন সহকর্মীকে দিয়ে কেউ একজন বলেছেন আমি মুক্তিযোদ্ধা না। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। যেখানে সাদেক হোসেন খোকা যুদ্ধ করেছে সেখানে আমি যুদ্ধ করিনি। আবার আমি যেখানে যুদ্ধ করেছি সেখানে সাদেক হোসেন খোকা যুদ্ধ করেনি। এটিই সত্য আমরা দু’জনেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি।’

কালের আলো/আরআই/জিকেএম