বিএনপির পাপের দায় বহন করছে আওয়ামী লীগ!

প্রকাশিতঃ 11:29 am | April 02, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির আমলে তারা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন, হাওয়া ভবনের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগও ছিল। বিএনপির সময়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের দাপট দেখে তটস্থ থাকতো আওয়ামী লীগ পন্থী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আওয়ামী লীগের ১০ বছরের ক্ষমতাকালে তারা ক্রমশ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। হাওয়া ভবনের ব্যবসায়ীরাই এখন আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ীতে রূপান্তর হয়েছেন। এদের কারণেই এদের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং অর্থলিপ্সার কাছেই ইমেজ নষ্ট হচ্ছে বর্তমান সরকারের।

সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপিপন্থী এসব ব্যবসায়ীদের অপকর্মের দায় গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। মোট কথা, বিএনপির ভূত সওয়ার হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপরেই। বিএনপির পাপের দায় বহন করছে আওয়ামী লীগ। এফ আর টাওয়ারে যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, এই ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলো রূপায়ন গ্রুপ। এই রূপায়ন গ্রুপের প্রধান লিয়াকত আলী খান মুকুল।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে তার ব্যবসায়িক উত্থান এবং মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এই ভবনের নকশার অনুমোদন ছিল ১৮ তলা পর্যন্ত। কিন্তু এই নকশা অনুমোদন ছাড়াই তিনি ২৩ তলা পর্যন্ত করে বহাল তবিয়তে তা আবার বিক্রিও করেছেন। যদিও তার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে এই নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে একটি ছায়া দলিল আছে। বোঝা যাচ্ছে সেটাও একটি জালিয়াতি।

কিন্তু লিয়াকত আলী খান মুকুল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি এবং প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং তার ব্যবসা আরও টইটম্বুর হয়ে উঠতে থাকে। এর ফলে বিএনপি জামাতের আমলে যে অনিয়ম তিনি করেছিলেন, সেগুলোই যে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন তা নয় বরং নতুন করে আরও অনেক অনিয়ম, আইন লঙ্ঘন করে বহাল তবিয়তে আছেন। এমনকি যখন এই এফ আর টাওয়ারের যখন তিনজনকে আসামি করে মামলা করা হলো, তাদের মাঝে দুইজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও মুকুল পলাতক। শুক্রবার দেশ ছেড়ে তিনি সিঙ্গাপুর চলে যান। কে তাকে বিদেশ যেতে সাহায্য করলো?

বাংলাদেশে এখন রেল, পাওয়ার এবং অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে বড় নাম হলো ম্যাক্স গ্রুপ। ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এই ম্যাক্স গ্রুপ হলো বিএনপি এবং হাওয়া ভবনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কনস্ট্রাকশন ফার্ম হিসেবে পরিচিত ছিল। এর বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর একসময় বিএনপি নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা আমার দেশ এর পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

অর্থাৎ, আমার দেশ এর অর্থায়ন হয়েছিল ম্যাক্স গ্রুপের টাকায়। আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। দুজনেই প্রকৌশল পরিষদের নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রকোশলী প্যানেলের হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়ে দুর্দান্ত প্রতাপে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এনআরবি প্রকৌশলীদের যে সম্মেলন হয়ে গেলো, সেখানে প্রধান স্পন্সর এবং অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলো এই ম্যাক্স গ্রুপ। বিদ্যুৎ খাতসহ অবকাঠামো, রেলের একাধিক বড় বড় প্রকল্প এখন ম্যাক্স গ্রুপের হাতে। ম্যাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেও সেই তদন্ত এগোচ্ছে না। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে এই তদন্তের গতি স্থবির হয়ে গেছে। গ্রুপটি এখন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আরও চেষ্টা করছে। বিএনপি বা হাওয়া ভবনের সঙ্গে তাদের যে যোগসাজশ বা যোগসূত্রতা ছিল, তা এখন হারিয়ে গেছে। বিএনপির এই পাপকে আওয়ামী লীগ ধারণ করেছে।

ওরিয়ন গ্রুপের কথা তো আমরা মোটামুটি সবাই এখন জানি। এই গ্রুপ বিএনপি জামাত আমলে প্রভাবশালী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম ছিল। হাওয়া ভবনের অন্যতম অর্থদাতাদের মধ্যেও ছিল এটি। বিএনপি জামাত আমলে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজও পেয়েছিল।

আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন, তখন এই ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে ওরিয়ন গ্রুপকে অনুমোদন না দিয়ে নতুন করে টেন্ডারের পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু তখন তার কথা শোনা হয়নি। ওরিয়ন গ্রুপই কাজটা পেয়েছিল। শুধু এটাই নয়, ওরিয়ন গ্রুপ এখন পাওয়ার প্লান্টসহ অনেক ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এবং সরকারের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠতার খবর পাওয়া যায়। হাওয়া ভবনের এই ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম কে আওয়ামী লীগেরই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবেই ধরা হচ্ছে। বিএনপি আমলে তার যে অনিয়ম, সেগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

এমন আরও অনেক উদাহরণই রয়েছে। যারা বিএনপির সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রী বা প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ ছিল, যারা হাওয়া ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করতো- তার এখন ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছেন। তারা ঐ আমলে যে অনিয়মগুলো করেছিলেন, সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করছে আওয়ামী লীগ। তার বড় একটি প্রমাণ হলো বনানীর এফ আর টাওয়ার।

কালের আলো/এমএইচএ