ভিপি নূরকে নাড়াচ্ছেন কারা?
প্রকাশিতঃ 9:38 am | March 18, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন যখন পরাজয় মেনে উদারতার পরিচয় দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন তখন খুশি হলেন নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূরও।
শোভনের তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে নূর ওই সময় বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।’
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে নূরের এই বক্তব্যের পর অনেকেই ধরে নিলেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে চলা উত্তেজনার অবসান হলো। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই পল্টি নিলেন নূর। শোভন তাকে মন থেকে বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করলেও তখনো নিজের আসল চেহারা উন্মোচন করেননি ‘শিবির’ সন্দেহের অভিযোগ উঠা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মোর্চার এই নেতা।
এরপর গত শনিবার (১৬ মার্চ) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানে যাওয়াকে কেন্দ্র করেও নানা নাটকীয়তার জন্ম দেন ডাকসু’র ২৫ তম এই ভিপি।
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনাসামনি দেখে তার মাঝে ছোটবেলায় হারানো মায়ের চেহারা ‘খুঁজে পেয়েছেন’ বলে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কদমবুসিও করেন নূর। এর আগে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রধানমন্ত্রীর অনেক প্রটোকল।
আমার প্রথমেই ইচ্ছা ছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগেই সালাম করা। কিন্তু তার নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছে। তাতে বিঘ্ন ঘটবে কি না এজন্য যাইনি। যেহেতু আমার মা নাই, আমি বলেছি, আমার সেই মাতৃত্বের ছায়াটা নেত্রীর মধ্যে।’
এসব কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন নূর। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বক্তব্য শুরুর আগে ডাকসু’র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সামনের সারিতে বসেন নূর। আবার বক্তব্যের পর তাকে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসানো হয়। নূর ডাকসু পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতাও চেয়েছিলেন।
মূলত নূরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সন্তানের মতোই ¯স্নেহ দেন। আদর করে তাকে তাকে নিজের পাশেও বসান। কিন্তু নূর তাঁর কথা থেকে যেন ঠিক একদিন পরেই সরে এসেছেন। ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নিবাচনের দাবি তুলেছেন তিনি।
রবিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘হাস্যকর’ একটি বক্তব্যও দিয়েছেন ভোট বর্জন করে ভিপি পদে বিজয়ী হওয়া কোটা আন্দোলনকারী এই নেতা। তিনি বলেন, “আমরা প্রথম শুনেছিলাম গণভবনে শুধু ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যাবেন।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত। তাদের দেখে আমার নিজের অস্বস্তিবোধ হয়েছে। আপনারা জানেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষের একবার ‘কনসেনট্রেশন’ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মানুষের আর কথা বলার মুড থাকে না। তাই আমি সেখানে (গণভবনে) অনেক কথা বলতে পারিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে আমরা সেখানে গিয়েছি।
কারণ, তিনি রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ নির্বাহী ব্যক্তি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার সেই এখতিয়ার রয়েছে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পুননির্বাচন দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বার বার নূরের ভোল পাল্টানো, সকাল-সন্ধ্যা বক্তব্য পরিবর্তন করায় তাঁর মতিগতি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আগাগোড়া আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্র ধারণ করেছেন নূর। তাকে বাগে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘন ঘন মত পাল্টে তিনি সুযোগ সন্ধানীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছেন।
কেউ কেউ বলছেন, গণভবনে প্রধামন্ত্রীকে মা বলে ‘সম্বোধন’ করা, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি নূরের পেছনের নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী। তাঁরা নূরকে ভর্ৎসনা করেছেন। মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যারা নূরকে ব্যবহার করে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তাঁরা নূরের এমন আচরণে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ। আবার নূরও না কী তাদের কাছে নানাভাবে দায়বদ্ধ থাকায় তাদের মনও ভাঙতে পারছেন না। এতে করে না কী ওই পক্ষ ‘থলের বিড়াল’ বের করে দেওয়ারও হুমকি ধমকি দিয়েছেন বলেও নানামুখী প্রচারণা চলছে।
এসব কারণেই ভিপি পদে শপথ নিতে নূরের মন সায় দিলেও অজানা শঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের একদিন পরেই রহস্যজনক কারণে আবার ‘ইউটার্ন’ নিয়েছেন। নূরের একেক সময় একেক বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের অনেকেই জানতে চেয়েছেন, নূরের পেছনে কারা রয়েছেন? কারা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো নাড়াচ্ছেন নূরকে? না কী নূরই নিজেকে বেশি ‘করিৎকর্মা’ প্রমাণ করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছেন?
কালের আলো/এএ