পরিবারেই মনোনয়ন লড়াই

প্রকাশিতঃ 11:41 pm | November 16, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

এবারের নির্বাচনে ঘরের ভেতর দল ভাগাভাগির ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজনীতির এই ভাগবন্টনে কোথাও মা জাতীয় পার্টির লাঙ্গল ধরেছেন আর ছেলে উঠেছেন নৌকায়।

আবার একই মায়ের দুই সন্তান কেউ মনোনয়নপত্র নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেউ বিপরীত জোট ঐক্যফ্রন্টের। ঘর ছাড়িয়ে ঘরের বাইরে শালা-দুলাভাই পর্যন্ত এমন ভাগাভাগি হচ্ছে।

সিলেটে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কিনেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র, অন্য দিকে তার শ্যালক ডাক্তার রিফা চাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য সারাদেশের ৩০০ আসনে ৪ হাজার ২৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন। আর বিএনপি থেকেও চার হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এদের মধ্য থেকে ৩০০ জনকে বাছাই করতে হবে উভয় দলের মনোনয়ন বা পার্লামেন্টারি বোর্ডকে।

এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহের পালায় দেখা গেছে একই ঘরের মধ্যে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। যেমন মা সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির লাঙ্গল ধরে আছেন গত নির্বাচন থেকে। তার ছেলে শামীম ইসলাম এবার মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন ভিন্ন আসন থেকে। তিনি প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে।

ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম আবারও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হতে দলটির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। মায়ের মনোনয়ন ফরম কেনার পরের দিন ছেলে শামীম ইসলাম ঢাকা-১১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে জমা দেন।

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী সালমা। তাদেরই ছেলে শামীম ইসলাম। জোটের সমীকরণে মা ও ছেলের মধ্যে কে কোন আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে আরও কয়েকদিন।

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি। তবে নাজমুল হুদা ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন আর তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের শিল্পপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে ভোটে লড়তে বিএনপির মনিরুল দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার ছেলে তরুণ ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিয়েছেন একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র।

উভয়ে নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পেলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভোটের মাঠে মুখোমুখি হবেন বাবা মনিরুল ইসলাম ও ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। সম্ভবত এটাই হবে সংসদ নির্বাচনে বাপ-বেটার ভোটের প্রথম লড়াই।

চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীর পরিবারেও ঘটেছে এমন ঘটনা। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) আসনের জন্য বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাকা চৌধুরী ভাই ও ছেলে। চাচা হলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার ভাতিজা এবং সাকার চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

সিলেট-১ সংসদীয় আসনে অর্থমন্ত্রীর ভাই ড. মোমেন মনোনয়ন নিয়েছেন আওয়ামী লীগের। একই আসনে তার ভাতিজা অর্থমন্ত্রীর ছেলে শাহেদ মুহিত প্রাথী হওয়ান জন্য মনোনয়ন নিয়ে রেখেছেন। এই আসনে চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে শালা-দুলা ভাইয়ের লড়াই। দুলাভাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আর শ্যালক হলেন সিলেট জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ডাক্তার আরিফ আহমদ মমতাজ রিফা। তারা দু’জনেই এবার সিলেট-১ আসন থেকে নিজ দলের পক্ষে মনোনয়ন নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ফরম কিনেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে। তার ভাই রশিদুল আলম কিনেছেন কুষ্টিয়া-১ ও কুষ্টিয়া-২ আসনের জন্য।

সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় ফরম কিনেছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে আইনি জটিলতায় নাসিম ভোট করতে না পারায় ছেলে জয় নির্বাচন করেছিলেন।

চাঁদপুর-২ আসনে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং তার ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আওয়ামী লীগের।

টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান, তার ছেলে মশিউজ্জামান রোমেল দুজনেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আসাদুজ্জামান বর্তমানে অসুস্থ।

হাজি মোহাম্মদ সেলিম অসুস্থ থাকায় ঢাকা-৭ আসনে তার পাশাপাশি ছেলে সোলায়মান সেলিমও মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে একই পরিবারের কয়েকজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শহীদ মমতাজ উদ্দীন, তার ছোট ভাই বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আরেক ভাই শহীদ মমতাজ উদ্দীনের স্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেফালী মমতাজ, শেফালী মমতাজের ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর।

নাটোর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে একই পরিবারের তিন ভাইবোন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের একজন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। তার বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলও বসে নেই। অন্যদিকে তাদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরীও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

পাবনা-৪ আসনে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পাশাপাশি তার মেয়ে মাহাজাবিন শিরিন পিয়া ও তার স্বামী আবুল কালাম পিন্টুও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

এদিকে বরিশালে বড় ভাই আন্দালিব রহমনা পার্থ ২০ দলের সঙ্গে জোট করে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। তার ছোট ভাই শান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম।

পার্থের ছোট ভাই ভোলা-২ আসনে নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র কেনেন।

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email