বড় বড় কোম্পানীর অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
প্রকাশিতঃ 4:10 pm | January 28, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
ডাচ বাংলা ব্যাংকে (ডিবিবিএল) চাকরির সুবাদে সার্ভার থেকে বিভিন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন জাকির হোসেন। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএস’র মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) থাকা ওয়াল্টন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফর্মে টান্সফারের একটি আবেদন আসে। সেই টাকা এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় টান্সফারের আবেদন করা হয়।
ডিবিবিএল’র বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে টান্সফারের আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়াল্টন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওয়াল্টন গ্রুপ থেকে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে বলা হয় তারা টাকা টান্সফারের আবেদন করেননি। পরে টান্সকফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে ওয়াল্টন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা টান্সফার করা চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. জাকির হোসেন (৩৫), ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান ওরফে সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো.আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভুইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)।
এর মধ্যে জাকির হোসেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত।
শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যায় তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
তিনি বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
চক্রটি এরকম জালিয়াতি আরও করেছে কি না একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে এরা ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে এরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি না তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।
এরা কী ধরনের অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি না বোঝা যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা থাকে।
পুলিশ বলছে, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ডিবিবিএলের এর সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।
কালের আলো/ডিএসকে/বিআরবি