‘সিরিয়াল কিলার’ থেকে ‘বাউল সেলিম’ হয়ে আত্মগোপনে যান হেলাল (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 4:20 pm | January 13, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
একাধিক হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের পর আত্মগোপনে যাওয়া ছদ্মবেশী বাউল ও বাউল গানের মডেল হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে খুনি হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ গানের বাউল মডেল হিসেবে অভিনয়ের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হয় স্থানীয়রা। এরপর তার বিষয়ে র্যাবকে জানানো হয়। ছয় মাস ধরে র্যাবের গোয়েন্দারা তার অবস্থান শনাক্ত করে।
র্যাব জানিয়েছে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অন্তত তিনটি হত্যা মামলায় জড়িত এই কিলারের আসল নাম হেলাল হোসেন (৪৫)। বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, র্যাবের অভিযানে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামি ও ‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ গানের বাউল মডেল হেলাল হোসেন সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয়মাস আগে একজন ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র্যাবের কাছে তথ্য দেয়। তখন জানানো হয়, এই বাউল মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। পরবর্তীতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র্যাব নিশ্চিত হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার মঈন বলেন, হেলাল ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। এর বাইরে ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলেও তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা এবং একটি চুরির মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাকে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করে খোঁজ-খবর নিলে হয়তো আরও মামলার বিষয়ে জানা যাবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হেলাল এলাকায় দুর্ধর্ষ হেলাল ও খুনি হেলাল নামে পরিচিত। ২০০০ সালে এক সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়ে পঙ্গু হন। এই ঘটনার পর হাত লুলা হেলাল হিসেবেও এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।
হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়। একই সঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারও চলমান থাকে। ২০১৫ সালেই চুরির মামলায় সে জামিনে মুক্ত হয় এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এরপরেই তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে ফেরারি জীবনযাপন শুরু করেন।
প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরে কমলাপুর থেকে ট্রেনে তিনি চট্টগ্রামে চলে যান এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে ট্রেনে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যান। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করেন।

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতে থাকেন। ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। প্রায় ৪ বছর ধরে ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলালের হাত পঙ্গু থাকায় ও মোটামুটি গান গাইতে পারায় জীবনধারণের জন্য বাউল পরিচয় বেছে নেন। প্রায় ৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশের ওই গানের শুটিং চলাকালে হেলাল রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। যার ফলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।
সাত বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেরারি জীবনযাপনের পর সবশেষ চার বছর কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। রেলস্টেশনে বাউল গান করে মানুষের কাছ থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলেও জানান তিনি।
কালের আলো/এসবি/এমএম