ঋণ জালিয়াতি, এসএ গ্রুপের শাহাবুদ্দিন আলম কারাগারে
প্রকাশিতঃ 9:23 pm | October 17, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এসএ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শাহাবুদ্দিন আলমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঋণ জালিয়াতির মামলায় মো. শাহাবুদ্দিন আলমকে করাগারে পাঠানো হয়।
বুধবার(১৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানী থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে আদালতে তোলে।
মহানগর হাকিম শরাফুজ্জমান আনসারী ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার ঘটনাটি তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে আসামির জড়িত থাকার যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। মূল রহস্য উদঘাটন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ও ব্যাংকের অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে কিভাবে ঘটনা ঘটিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে ব্যাংকের অফিসার হয়ে কে জাল স্বাক্ষর করেছেন, ব্যাংকের তথা সাধারণ জনগণের ৩ হাজার ৬২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯ টাকা ঋণের নামে কী উদ্দেশ্যে গ্রহণ করেছিল তা সহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় এ আসামির নাম প্রকাশিত হয়েছে। এ আসামিসহ প্রতারণার মাধ্যমে উল্লিখিত অর্থ ও তাদের নামীয় সম্পদসমূহ কৌশলে ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনের নামে হস্তান্তর করে কোম্পানি বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে কোম্পানি ম্যাটার দায়ের করে গাড়ি-বাড়ি বিক্রয় করে বিদেশ পালানোর চেষ্টা করছেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বুধবার ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের করা একটি মামলায় মো. শাহাবুদ্দিন আলমকে গ্রেফতার করা হয়।
এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন আলম বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। তার মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে তার নেয়া ঋণের পরিমাণ ৭০৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৯৪০ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩৬ কোটি ১১ লাখ ৪১ হাজার, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৭০১ কোটি ৪৯ লাখ ৩১ হাজার, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার, কৃষি ব্যাংকের ষোলশহর শাখা থেকে ১৭৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার, অগ্রণী ব্যাংক করপোরেট শাখা থেকে ৫৪৮ কোটি ৪৪ লাখ, জনতা ব্যাংক শেখ মুজিব রোড করপোরেট শাখা থেকে ১১৮ কোটি ২২ লাখ ৭১ হাজার ও প্রাইম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি।
মো. শাহাবুদ্দিন আলম ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের নুরুল আমিন লাবলুর কাছ থেকে ১০ কোটি ও মেওয়া ওয়েল অ্যান্ড ফ্যাডস থেকে ২৬ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ তিনি পরিশোধ করেননি।
শাহবুদ্দিন আলম বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডেরও পরিচালক।
তার মালিকানাধীন এসএ গ্রুপের অধীনে তেল পরিশোধন, খাদ্যপণ্য, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য, পানীয়, সিমেন্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাজারে এই গ্রুপের পরিচিত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গোয়ালিনি কনডেন্সড মিল্ক, গুঁড়ো দুধ, মুসকান ড্রিকিং ওয়াটার, সয়াবিন তেল, ঘি, আটা, ময়দা ইত্যাদি।
কালের আলো/এনএল