ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে ফুটবলের জন্য চার স্টেডিয়াম চেয়েছে বাফুফে

প্রকাশিতঃ 1:26 am | January 25, 2024

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কালের আলো:

নতুন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে ফুটবলের জন্য চারটি আলাদা স্টেডিয়াম চেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় এমন দাবি জানায় বাফুফে। বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

এ বিষয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আমরা আলাদা স্টেডিয়াম চেয়েছি অন্তত চারটি। মন্ত্রী মহোদয় দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি এই স্টেডিয়ামগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ করে দেওয়ার কথা বলেছেন, তবে তিনি এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা বলেছি, বাফুফেকে স্টেডিয়ামগুলো দিলে, আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করব।’

যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বৈঠকটি চলে দীর্ঘ সময়। আলোচনা শেষে ফুটবলে নানান সমস্যা ও সম্ভাবনা শুনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী। সাক্ষাতের পর বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘নতুন মন্ত্রী আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ। আমাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের সমস্যাগুলো শুনেছেন। এই মুহূর্তে মূল সমস্যা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ, এটা যত দ্রুত শেষ করা যায়। এখানে প্রিমিয়ার লিগসহ অনেক খেলা হয়ে থাকে। অনেক দিন হলো সেখানে খেলা হচ্ছে না। এছাড়া শুধু ফুটবলের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম চেয়েছি। যেসব জেলায় খেলাগুলো হয়, সেখানে ডিএফএ যেন মাঠ পায়। লিগ যেন চালাতে পারে। মন্ত্রী মহোদয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’

সারা বছর ফুটবল চালাতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফিফা ও এএফসি বড় অংশ দিলেও বাকিটা স্পন্সরের মাধ্যমে আসে। ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে অর্থনৈতিক বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সালাম মূর্শেদী বলেছেন, ‘ফিফা থেকে যে টাকা পাই, তা খাতওয়ারি খরচ হয়। স্পন্সরের সীমাবদ্ধতা আছে। মন্ত্রণালয় থেকে সাপোর্ট চেয়েছি। দেশের বাইরে খেলতে যেতে হয়। ক্যাম্প খরচসহ অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

আসছে অক্টোবরে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হচ্ছে না। বিকল্প ভেন্যু হিসেবে আর্মি স্টেডিয়াম কিংবা বসুন্ধরা কিংস রয়েছে। বাফুফের এই সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, ‘সাফের খেলায় যেন স্বাগতিক হতে পারি, তিনি (ক্রীড়ামন্ত্রী) সহযোগিতা করবেন। চারটি মাঠ হালনাগাদ করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সমস্যাগুলো জানতে পেরেছেন। বুঝতে পেরেছেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আমাদের চ্যালেঞ্জ বা সংকট যা আছে তা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে করতে পারবো।’

ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তাও চাওয়া হয়েছে বলে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মূর্শেদী জানান ‘এখন যে টুর্নামেন্ট বা লিগ হচ্ছে, দেশে বা বিদেশে, কেমন খরচ হয়ে থাকে বা হবে, তার একটা খসড়া তাকে দিয়েছি। পরবর্তীতে তিনি ব্যবস্থা করবেন। স্পন্সর যেন পাই সেজন্য সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। সিড মানি যেন দেওয়া হয়। ফিক্সড ডিপোজিট করে যেন চলা যায় তাও বলেছি আমরা।’

ক্রীড়াঙ্গনে ‘গুড গভর্নেন্স’ নিশ্চিত করতে চান মন্ত্রী
ক্রীড়াঙ্গনকে নতুন রূপে ফেরাতে তৎপরতা শুরু করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। এখানে ‘গুড গভর্নেন্স’ নিশ্চিত করতে চান তিনি। এদিন সচিবালয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।

পাপন বলেছেন, ‘কোনও বিশেষ ফেডারেশনের জন্য নয়, ক্রীড়ার সকল ক্ষেত্রেই গুড গভর্নেন্স নিশ্চিত করা হবে। আর যারা ব্যত্যয় ঘটাবে, তারা অবশ্যই পরবর্তীতে সরকার থেকে কোনও সহযোগিতা পাবে না।’

এসময়ে ক্রীড়াঙ্গনকে অগ্রসরমান করতে সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ক্রীড়ামন্ত্রী। ফুটবলকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের নারী ফুটবলাররা ধারাবাহিকভাবে ভালো ফলাফল অর্জন করছে। পুরুষরাও ভালো করছে। তারা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

ফুটবলের সমস্যা সম্পর্কে অবগত পাপন, ‘ফুটবলে কিছু সমস্যা রয়েছে। ফুটবল ফেডারেশনের মাঠ সংকট রয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন ও সংস্কার কাজ চলমান। এটি শেষ করার জন্য ৩১ ডিসেম্বর ডেডলাইন রয়েছে। এটি যেন আর না পেছায়, সেদিকে আমরা সচেষ্ট থাকবো। ইতোমধ্যে আমি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রকৃত চিত্র সশরীরে দেখতে চাই। দেখে এসে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো।’

তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশাপাশি কমলাপুর স্টেডিয়ামও পরির্দশন করবেন বলে জানিয়েছেন, ‘কমলাপুর স্টেডিয়ামে সংস্কারের বিষয়টিও আমরা ভাবছি। কমলাপুর স্টেডিয়াম যদি আরও উন্নত করা যায়, তাহলে সেখানেও ফুটবল ফেডারেশন অনেক টুর্নামেন্ট আয়োজন বা নানাভাবে ব্যবহার করতে পারে।’

ফুটবল ফেডারেশনের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবলের ব্যাপ্তি অত্যন্ত বেশি। দেশে-বিদেশে খেলায় অংশগ্রহণে নানা ব্যয় হয়ে থাকে। ফলে তাদের বাজেটের চাহিদাও বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসার আহবান জানাই।’

কালের আলো/এমএএএমকে