চকরিয়ায় ৫ ভাইয়ের মৃত্যু : ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না সেই পিকআপ চালকের

প্রকাশিতঃ 6:41 pm | February 12, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে বেপরোয়া গতির পিকআপের চাপায় পাঁচ ভাই মৃত্যুর ঘটনায় পিকআপটির চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে আটক করেছে র‌্যাব। ঘন কুয়াশার মধ্যে বেপরোয়া গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন তিনি।

র‍্যাব জানিয়েছে, নিহতদের কেউই পূর্বপরিচিত নন বলে জানিয়েছেন ঘাতক পিকআপের চালক সাইফুল। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দুই বছর ধরে পিকআপ, চান্দের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পর পিকআপ মালিকের নির্দেশে পালিয়ে থাকার উদ্দেশ্যে আত্মোগোপনে যান সাইফুল।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ৯ ভাই-বোন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় পিকআপের চাপায় ৫ সহোদর অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্বরণ সুশীল (২৪) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত তাদের ভাই রক্তিম সুশীল এবং বোন হীরা সুশীল বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়ের মামলায় শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে পলাতক চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে (২২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব জানায়, ওই ঘটনায় নিহতদের ভাই প্লাবন সুশীল (২২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পিকআপচালককে আসামি করে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর অভিযানে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঘাতক পিকআপের চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বান্দরবানের লামার আলী জাফরের ছেলে।

কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক সাইফুল গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার দিন ভোরে তারেক ও রবিউল নামের দুই ব্যক্তিকে নিয়ে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজিবোঝাই পিকআপ নিয়ে তিনি রওনা হন। ঘন কুয়াশা থাকার পরও চালক সাইফুল দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন।

ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকাদের দেখতে পারেননি চালক সাইফুল। অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ করলেও পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুর্ঘটনাটি ঘটান। এ সময় তার সঙ্গে মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল ছিলেন।

সাইফুল র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় পিকআপটি ঘণ্টায় প্রায় ৬৫-৭০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পিকআপটি প্রায় ১০০ ফুটের মতো সামনে চলে যায়। পরে চালক পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

র‍্যাব জানিয়েছে, সাইফুলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দীর্ঘ দুই বছর ধরে তিনি পিকআপ, চাঁদের গাড়ি ও তিন টনের ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যান চালানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তিনি পিকআপটি মালিকের কাছ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে চালানো শুরু করেন। ইতোপূর্বে তিনি বান্দরবানের লামাতে একটি রাবার বাগানে চাকরি করতেন।

দুর্ঘটনার পর সাইফুল মালুমঘাট বাজারের একটি স্থানে পিকআপ থামিয়ে মালিককে কল করে বিষয়টি জানায়। মালিক তাকে পিকআপটি পরের কোনো এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সাইফুল ডুলাহাজরায় এসে পিকআপটি রাখেন এবং লোকাল বাসে করে চকরিয়া গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন। মালিকের পরামর্শে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন শেষে ঢাকায় আসেন এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।

পিকআপের মালিক চকরিয়ার মাহামুদুল করিম সবজি পরিবহনের ব্যবসা করেন। তিনি চকরিয়ার সবজির আড়ৎ থেকে কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী এলাকায় সবজি সরবরাহ করতেন। তার ছেলে তারেক সবজি সরবরাহের তদারকি করতেন এবং ভাগিনা রবিউল তারেকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

২০১৬ সালে তিনি পিকআপটি কেনেন। গত চার বছর ধরে পিকআপের ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন এবং গত তিন বছর ধরে রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। দুর্ঘটনার পর পিকআপের মালিক, তার ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

এ ঘটনার সঙ্গে কোনো পূর্ব শত্রুতার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না – জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন কোনো তথ্য মেলেনি। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে চালক সাইফুল সামনের কাউকে দেখতে পারেননি। অধিক গতির কারণে কাছাকাছি এসেও ব্রেক করে পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সাইফুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম