ফেসবুকেই চূড়ান্ত হয় রিফাত হত্যার পরিকল্পনা, কিলিং মিশনে ‘০০৭’ গ্রুপ

প্রকাশিতঃ 9:35 pm | June 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার আগের রাতেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় ফেসবুকে। ‘007’ নামের একটি ফেসবুক চ্যাট গ্রুপেই নির্দেশনা দেওয়া হয়, কে কখন কী অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হবে ঘটনাস্থলে।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের অংশগ্রহনে পরদিন সকালে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন: সেই মিন্নি ও খুনি নয়নের বিয়ের খবর ফাঁসে তোলপাড়

ওই চ্যাট গ্রুপের কথোপকথনে দেখা যায়, রিফাত ফরাজী নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গ্রুপের সবাইকে সকাল ৯টার দিকে কলেজে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই একটি রামদার ছবি দিয়ে সেটিও নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে সক্রিয়ভাবে উত্তর দিতে দেখা যায় মোহাম্মদ নামের আরেকটি আইডিকে। দা নিয়েই উপস্থিত হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় সে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এই গ্রুপের নাম রাখা হয়েছে ০০৭। মেসেঞ্জারের এই গ্রুপটির নেতৃত্বে আছেন রিফাত ও হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড। জানা গেছে ‘বন্ড’ অংশটি নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নয়ন নিজেই। আর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেবল মেসেঞ্জার গ্রুপ নয়, বাস্তবেও ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করেন নয়ন। দীর্ঘদিন ধরে বরগুনার কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছেন তারা। তাদের সংকেত ছিল ০০৭। এই সংকেত নয়ন বন্ডের মোটরসাইকেল ও বাড়ির দেয়ালেও আঁকা আছে।

এবিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে গ্রুপের বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত এগিয়ে চলছে।’

রিফাত হত্যায় তিন আসামি রিমান্ডে

এদিকে চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার(২৮ জুন) বেলা ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। বিকেলে আদালতের বিচারক আসামি মোহাম্মদ রাসেল চন্দন ও হাসানের সাত দিনের এবং নাজমুলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বৃহস্পতিবার(২৭ জুন) সকালে নিহতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৪নং আসামি চন্দন, ৯নং আসামি হাসান ও ভিডিও ফুটেজ দেখে নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বরগুনা শহরের কলেজ সড়কে বুধবার(২৬ জুন) সকালে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে এলোপাথাড়ি কোপায় সন্ত্রাসীরা। স্ত্রী বাধা দিয়েও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি।

হামলার পর রিফাত শরীফকে (২৫) গুরুতর অবস্থায় প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাকাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শরীফের মৃত্যু হয়।

রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

কালের আলো/এনএল/এমএম

Print Friendly, PDF & Email