ডলার কিনে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রকাশিতঃ 9:15 am | July 16, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কলের আলো:
মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দর কমে আসছে, আর এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়েই গত দুই দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার কিনেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে নিজেদের মধ্যে ডলার লেনদেন করছে। ফলে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কাটিয়ে মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় এখন ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি সংযত—অর্থাৎ কম দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এর ফলে আমদানিকারকরা তুলনামূলক কম দামে ডলার পাচ্ছেন। আর উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক এখন কিনছে নিলামের মাধ্যমে, যা বাজারকে আরও স্থিতিশীল করতে সহায়তা করছে।
এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, এখন আমদানি বিধিনিষেধ ও বিলাসী পণ্যে আরোপিত অতিরিক্ত শর্তসমূহ তুলে নেওয়ার সময় এসেছে। এতে আমদানি বাড়বে, যা দেশের বাণিজ্যে গতিশীলতা ফেরাবে।
গত চারদিনের ধারাবাহিক দরপতনের পর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এদিন সর্বোচ্চ ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ৮০ পয়সায় ডলার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন এই হার ছিল যথাক্রমে ১২০ দশমিক ১০ এবং ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা। এতে একদিনেই ডলারের গড় বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
এদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ২২টি ব্যাংকের কাছ থেকে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে, প্রতি ডলারের দর ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। আর গত রোববার কিনেছিল ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
উল্লেখ্য, দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির অন্যতম কারণ ছিল ডলারের উচ্চমূল্য। এখন তা কমে আসায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যও হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর এই প্রেক্ষাপটেই বর্তমান ডলারের দরকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে ধরে রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ১২১ টাকায়, যা এক মাস আগেও ছিল ১২৩ টাকার ওপরে। ডলারের দর কমলেও প্রবাসী আয় বাড়ছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখনো স্থবিরতা বিরাজ করছে। আমদানিতে গতি নেই, এলসি খোলার হারও কম। ফলে ব্যাংকগুলোর ডলারের চাহিদা কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বকেয়া আমদানি দায় পরিশোধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, যা ডলার সংকট কাটাতে সহায়ক হয়েছে। তবে ডলারের দর কমে গেলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে—এই ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করছে।
কালের আলো/এএএন