মিয়ানমার সেনাদের গুলি, সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনা

প্রকাশিতঃ 12:52 pm | March 02, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ৫০ গজের মধ্যেই ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে মিয়ানমারের সেনারা। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল বাড়িয়েছে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশও (বিজিপি)।

বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে থাকা মায়ানমারের বর্ডার গার্ড সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। স্থানীয় ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মায়ানমার সৈন্যদের ফাঁকা গুলিবর্ষণের পর এলাকায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

এ দিকে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের উত্তেজনার মধ্যেই তিন দিনের সফরে শুক্রবার বাংলাদেশ আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিস। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য কক্সবাজারের ক্যাম্পে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুসারে, ১৭ হাজার রোহিঙ্গা বান্দরবান সীমান্তে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। আর অন্তত সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়।

আতঙ্কে নোম্যান্স ল্যান্ডের প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্তের এপারে জনবল বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও।

তবে শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের সেনারা নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার-ইউএনও সরওয়ার কামাল।

তিনি জানান, সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া ঘেষে কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি অবস্থান করেছিল। শুক্রবার সকালে তারা কিছুটা পিছু হটেছে।

সকালে তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রয় ক্যাম্পের ওপারে দুটি পিকআপে করে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে মিয়ানমার।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের নেতৃত্বে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ঘুমধুমের তুমব্রু যাচ্ছেন।

পরিদর্শন শেষে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সভায় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়রদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও।

নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া কোনাপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নূর হোসেন বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতের বেলায় কয়েক দফায় মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের নোম্যান্স ল্যান্ড ছাড়তে বলেছে মিয়ানমারের পুলিশ। মদের বোতল ছুড়ে মেরেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারেনি রোহিঙ্গারা।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, “সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সতর্ক প্রহড়ায় রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির জনবলও। সীমান্তে ফাকা গুলি বর্ষণের পর পতাকা বৈঠকের জন্য মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত ওপার থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ইউএনও সরওয়ার কামাল জানান, সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়েই মূলত উত্তেজনা। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকার এপারের মানুষদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে বেলা সাড়ে ১১ টায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৈঠক করবেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কাছে জানতে চেয়েছিল ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই জানিয়েছেন, ওরা বাংলাদেশকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। এর আগে আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও দেখেছেন। আমরা বিষয়টি দেখছি। আমরা কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছি।”

 

কালের আলো/ওএইচ