ইসকন ও সংখ্যালঘু ইস্যুতে ফের মুখ খুলল ভারত

প্রকাশিতঃ 6:44 pm | November 29, 2024

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘের (ইসকন) নেতা ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আলোচনা হচ্ছে ভারতে। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে গেছে বলেও প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এমনকি দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এ ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। আবারও এসব বিষয়ে কথা বলল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ বিষয়ে কথা বলেন। সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ সাংবাদিকই বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং এক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ভারত কী করছে জানতে চান।

এসব প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে সেটি তারা পালন করবে।’

বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি এবং ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেফতার নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দেখেছি আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি তার বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে এবং তার যে আইনি অধিকার রয়েছে সেটি পুরোপুরিভাবে তিনি পাবেন।’

এর আগে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও তার জামিন নাকচ হওয়ার ঘটনাটি হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর উগ্রপন্থীদের হামলার ধারাবাহিকতায় ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া, লুটপাট ও মন্দিরে ভাঙচুরের অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে।

ভারত বলছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের বৈধ দাবিগুলো তুলে ধরায় একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিবৃতিতে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আরজি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা হয়।

গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ