রূপগঞ্জ বরপা আস্তানা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতো জঙ্গিরা
প্রকাশিতঃ 6:52 pm | July 10, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
দলীয় নির্দেশনা এবং বিশ্রাম নিতে সারাদেশ থেকে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্যরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ বরপায় একটি আস্তানায় আসতো। মূলত এ আস্তানাটি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল জঙ্গি সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার জঙ্গি আস্তানার ‘প্রধান সমন্বয়কারী’ জাভেদ আবীর ওরফে এনামুলকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পেয়েছে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।
সংস্থাটি বলছে, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতের আগে বরপার আস্তানায় আসত জঙ্গিরা। পরে ওই আস্তানা থেকে পরবর্তী দিকনির্দেশনা পেয়ে টার্গেট গন্তব্যে যেত। মূলত বরপার আস্তানাটি আনসার আল ইসলামের সদস্যরা তাদের ট্রানজিট আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
বুধবার এটিইউর অপারেশন শাখার পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন আনসার আল ইসলাম। আন্তর্জাতিক ‘জঙ্গি’সংগঠন আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার কার্যক্রম অনুকরণ ও অনুসরণ করে কার্যক্রম চালানো এ সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ফের আস্তানা গড়ে তুলছে। ঢাকার আশেপাশে তারা আস্তানা গড়ে সারাদেশে থাকা সংগঠনের সদস্যদের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহারও করছে। পুলিশের এন্টি টেরোজিম ইউনিট রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানার প্রধান জাবেদ হোসনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, গত ৯ জুন নেত্রকোনার সদর থানার কাইলাটি ইউনিয়নের বাসা পাড়া গ্রামে একটি খামার বাড়িতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকার তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে এটিইউ। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ এবং বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। অভিযানের ধারাবাহিতকায় ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর সমন্বয়কারী হিসেবে পারভীন আক্তার নামে এক নারী উগ্রবাদীর নাম পাওয়া যায়। পরে কক্সবাজার এলাকা থেকে পারভীন আক্তারকে গ্রেপ্তার করে এটিইউ। তার দেয়া তথ্যে পাওয়া যায় নারায়নগঞ্জের রুপমগঞ্জ থানার বরপা এলাকায় আনসার আল ইসলামের একটি আস্তানা রয়েছে। ওই আস্তানায় আনসার আল ইসলামের সদস্যদের নিয়মিত যাতায়াত আছে। এমন তথ্যের ভিত্তিত্বে এটিউর বোম ডিস্ফোজাল ইউনিট বরপা এলাকার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। তবে অভিযানের আগেই সেখানে থাকা জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। পরে আস্তানাটি ঘেরাও করে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু বোমা ও বোমা তৈরীর নানাবিধ সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জাবেদ হোসেন নামের একজন ওই আস্তানার জন্য ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। জাবেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা শুরু করে এটিইউ। মঙ্গলবার টঙ্গির স্টেশন রোড থেকে জাবেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসপি ছানোয়ার জানান, জাবেদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বরপায় ওই আস্তানাটি কয়েকমাস আগে ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো। সারাদেশে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্যরা এ আস্তানায় এসে বিশ্রাম নিতেন। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতের আগে বরপার আস্তানায় আসতেন। পরে ওই আস্তানা থেকে পরবর্তী দিকনির্দেশনা পেয়ে টার্গেট গন্তব্যে যেতেন। মূলত বরপার আস্তানাটি আনসার আল ইসলামের সদস্যরা তাদের ট্রানজিট আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এসপি সানোয়ার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নেত্রোকোনার আস্তানায় অভিযান পরিচালনার পর সমন্বয়কারী পারভীনকে গ্রেপ্তার করার পর জানা গেছে, নেত্রোকোনার বাসাপাড়া গ্রামের একটি খামার বাড়ি জঙ্গিরা মাছ চাষের করবেন জানিয়ে লিজ লেন। কিন্তু মাসের চাষের অন্তরালে সেখানে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্যদের সারাদেশ থেকে রিক্রুট করে নানাবিধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বোমা তৈরী কিভাবে করা হয়, সেগুলো কিভাবে বিভিন্ন হামলায় ব্যবহার করা হবে, জঙ্গিদের টার্গেট ব্যক্তিদের উপর কিভাবে হামলা করা হবে, সেই হামলায় অস্ত্রের ব্যবহার কিভাবে হবে এসবের প্রশিক্ষন দেওয়া হতো। ওই প্রশিক্ষন কেন্দ্রে গত ৪ বছরে শতাধিক সদস্যকে প্রশিক্ষন দিয়েছিলো গ্রেপ্তারকৃত জাবেদ। নেত্রকেনার আস্তানায় অভিযানের পর জাবেদ বরপা এলাকায় নতুন আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন। ওই আস্তানার কার্যক্রম সমন্বয় করতেন জাবেদ নিজে।
গ্রেপ্তারকৃত জাবেদ হোসেনও নেত্রকোনায় ‘আনসার আল ইসলাম’ এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বোমা তৈরীতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অভিজ্ঞতার কারনে তিনি তার নিজ ভাড়া বাসায় বোমা তৈরী করে আসছিলেন। এর আগে অনলাইনে উগ্রবাদী প্রচরনা করার অভিযোগে জাবেদ একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলো কয়েক বছর আগে। ওই মামলায় ৬ মাস কারাভোগ করে জামিন পান। জামিনে এসে জাবেদ সক্রিয়ভাবে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম নিজেকে জড়ায়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার ছানোয়ার বলেন, আনসার আল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর হামলায় নিস্ত্রিয় থাকলেও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আনসার আল ইসলামের সদস্য আবারো দেশব্যাপী সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে তাদের অর্থদাতা হিসেবে যারা সহযোগিতা করছে এমন কিছু ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া সংগঠনটি যারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে এটিইউ। তদন্তের স্বার্থে এখন এসব ব্যক্তির নাম-পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
কালের আলো/এমএইচইউআর