আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক উচ্চ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ার টার্গেট প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 3:00 pm | May 05, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক উচ্চ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ার টার্গেট নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ টার্গেট বাস্তবায়নে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারপ্রধান আরও উজ্জ্বল করতে চান সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি। একই সঙ্গে জাতির আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক এই বাহিনীটির উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুকুটে প্রতিনিয়ত তিনি যুক্ত করছেন নতুন পালক। বাস্তবায়ন করছেন একের পর এক সময়োপযোগী প্রকল্প। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারসহ জনসাধারণের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (এএফআইপি) বিভাগের জন্য নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা, সেমিনার, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজনের লক্ষ্যে আর্মি সেন্ট্রাল অডিটরিয়াম, সেনাপ্রাঙ্গণ এর নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।

রোববার (০৫ মে) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসে নবনির্মিত এএফআইপি ভবন ও আর্মি সেন্ট্রাল অডিটরিয়াম, সেনাপ্রাঙ্গণ এর শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা.সামন্ত লাল সেন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। এ সময় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আধুনিক, পেশাদার ও চৌকস সশস্ত্রবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তাঁর নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। এছাড়া তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই তাঁর উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮’ ও ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেন। ফলত ধারাবাহিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন করে চলেছে সরকার।

রোববার (০৫ মে) প্রধানমন্ত্রীর দরবার অনুষ্ঠানেও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন ‘আমাদের ২০০৮ এর নির্বাচনের লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কাজেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠবে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ দরবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর দরবারে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর জনআস্থা অর্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের যে কোন দুঃসময়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে আছে এবং একটা ভরসাস্থল হিসেবে আজ সে আস্থা সশস্ত্র বাহিনী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল।’ যে কোন সেনাবাহিনীর দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস একান্তভাবে জরুরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রচেষ্টা ছিল সেনাবাহিনীর প্রতি যেন সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধার হয়। আর যে সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে না তারা কখনো কোন রণাঙ্গনে বিজয় অর্জন করতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে।’

ফোর্সেস গোল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক ও জ্ঞান সম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী
সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন তারই ভিত্তিতে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে তাঁর সরকার তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফোর্সেস গোল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা চাচ্ছি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক ও জ্ঞান সম্পন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। এখন, তার সরকারের লক্ষ্য সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করা।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে অবদান রাখছেন তাতে প্রত্যেকটি দেশ এর ভূয়শী প্রশংসা করে থাকে। কাজেই সেটাকে আরো উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

দু’ভবনের আদ্যোপান্ত
১৪ তলা এএফআইপি ভবনটি আধুনিক পরীক্ষাগারে সজ্জিত যেখানে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের অনুক্রম, স্বয়ংক্রিয় রোগজীবাণু শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ এবং মাল্টি-হেডেড মাইক্রোস্কোপ ইনস্টল করা হয়েছে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় মিলনায়তন সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন গুরুত্বপূর্ণ সভা, সেমিনার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্মিত হয়েছে।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email