ক্রীড়া কমপ্লেক্স, মেডিক্যাল কোর সবই পাচ্ছে পুলিশ
প্রকাশিতঃ 7:43 am | February 05, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
এক অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের বিভাগীয় ও পেশাগত স্পন্দন অনুভব করেন। ফলে গতানুগতিকতার উর্ধ্বে ওঠে একটি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, দক্ষ ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।’
পুলিশ প্রধানের বক্তব্য সত্যে প্রমাণিত হলো আরো একবার। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক পুলিশের মর্যাদা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কল্যাণ সভায় ক্রীড়া কমপ্লেক্স, আলাদা মেডিক্যাল কোর, বিভিন্ন ভাতাসহ প্রয়োজনীয় সব দাবিই পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজেদের উত্থাপিত সব দাবিই পূরণ হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন পুলিশের সর্বস্তরের সদস্যরা। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই বলেন, আইন-শৃঙ্খলাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ব্যয় নয়, বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করি। এবারো প্রধানমন্ত্রী সব দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।’

সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত কল্যাণসভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। এই সময় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
কল্যাণসভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদস্যদের সব দাবিই মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু আজীবন রেশন দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কল্যাণসভা শুরুর পর প্রথমেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল নাজমুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে পুলিশের অনেক সফলতা রয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোনও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। তিনি একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী এ দাবি মেনে নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য জমি দেখতে নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।
আরো পড়ুন:
সেরা পুলিশ সদস্যদের পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
রংপুরের কুড়িগ্রামে কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মাহবুবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন দেওয়ার দাবি করেন, যাতে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও এ সুবিধা পেতে পারেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রাখবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট সিলভিয়া ফেরদৌস বলেন, এখন এক কাপ চায়ের দাম ১০ টাকা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও বেশি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগের সেই ২০-২৫ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ট্রাফিকরা এখন বর্তমানে ২০১১ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী ৩০ ভাগ ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমান (২০১৫ সালের) বেতন স্কেল অনুযায়ী সেই ভাতা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া গ্রেডভিত্তিক ভাতা বৃদ্ধিরও দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী এই ট্রাফিক সার্জেন্টের দাবিও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

পুলিশ সদস্যরা ব্যক্তিগত যেসব মোটরসাইকেল সরকারি কাজে ব্যবহার করেন, সেগুলোর জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসআই (নিরস্ত্র) কামরুল আলম। প্রধানমন্ত্রী এ দাবিও পূরণের আশ্বাস দেন।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আহাদ খান বলেন, চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা মারা গেলে বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। গুরুতর আহত হলে পান মাত্র এক লাখ টাকা। এটাকে যথাক্রমে আট ও চার লাখ টাকা করার দাবি জানান তিনি।
আরো পড়ুন:
‘নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়’
আর দায়িত্বরত অবস্থায় এবং অভিযানে গিয়ে মারা গেলে যথাক্রমে ১৫ লাখ ও আট লাখ টাকা দেওয়ারও দাবি জানান এই ওসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দাবিও মেনে নেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এএসপি সুমন কান্তি চৌধুরী পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর করার দাবি করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনি আগেও সম্মতি জানিয়েছিলেন। আবারও আপনার কাছে এটা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ আছে। সেই হিসাবে বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতেও যেন পাঁচ শয্যার আইসিইউ করা হয়।
পুলিশের জেলা হাসপাতালগুলোতে ন্যূনতম চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করারও দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার এসব দাবিও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

একটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) কালের আলোকে বলেন,প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপিত দাবিসমূহ একেবারই যৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রী অনেকটা খুশি মনেই এসব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে ভোটের মাধ্যমে সরকারের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে শুরুতেই প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পুলিশের কাজ হচ্ছে নিরপত্তা সঠিকভাবে বজায় রেখে জনগণের সেবায় এগিয়ে আসা।
‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পুলিশের প্রত্যেক সদস্যের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে আপনারা জনবান্ধব পুলিশে পরিণত হবেন— এটাই আমার প্রত্যাশা।’
তবে এবারই প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রেকর্ডসংখ্যক ৩৪৯ জনকে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে, ২০১৮ সালে ১৮০ জনকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়। এছাড়া ৫০১ জন পুলিশ সদস্যকে আইজিপি ব্যাজ পদক হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
কালের আলো/আরআর/এএ