যানজটে অস্থির নগরজীবন
প্রকাশিতঃ 8:59 pm | March 14, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
রমজানেও রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। অফিস শুরু ও শেষের সময়ে যানজট প্রকট আকার নিচ্ছে। বলা চলে এ সময়টিতে যানজটে অস্থির থাকছে নগরজীবন। যানজট সহনীয় মাত্রায় নিতে কাজে আসছে না কোন উদ্যোগ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জরিপ বলছে, রাজধানীতে প্রতি ২ ঘণ্টার যাত্রাপথে ৪৬ মিনিটই নষ্ট হয় যানজটে। এভাবে বছরে গড়ে নষ্ট হয় ২৭৬ ঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা ও শ্রমের মান।
জানা যায়, প্রতি বছর রমজান এলে এটি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। চলতি বছর রমজানের শুরু থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা গেছে। অফিস শুরুর সময় যানজটের তীব্রতা কিছুটা কম থাকলেও, অফিস শেষে সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। রমজানের তৃতীয় দিনেও বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে এদিন বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সড়কেই যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এতে সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট। গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালগুলোতে যানবাহনের চাপ সামলাতে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, মগবাজার, বাংলামোটর, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, মিন্টু রোড, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, পল্টন এলাকায় যানবাহনের তীব্র চাপ ছিল। সিগন্যালগুলোতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যানবাহনকে। তবে, মেট্রোরেল যেসব রুটে রয়েছে, সেসব রুটে তেমন যানজট ছিল না। ফলে মেট্রোতে পা ফেলারও জায়গা ছিল না।
বস্তুত যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন নগরবাসী। শিক্ষার্থীরা সময়মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। অফিস-আদালতসহ নানা কাজে কর্মজীবীরা সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে যানজট। স্বল্প দূরত্বের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অকারণে দীর্ঘ সময় রাস্তায় বসে ধৈর্যের ব্যাঘাত ঘটছে।
সাভার-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী এম এম লাভলী পরিবহনের এক হেলপার বলেন, ট্যানিক্যাল, কলেজগেট, আড়ং, কারওয়ান বাজারে ব্যাপক যানজট রয়েছে। সকালের তুলনায় বিকেলে যানজট বেশি থাকে। আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতে দেড় দুই, ঘণ্টা চলে যায়।
যানজটের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকলেও বেশিরভাগ গণপরিবহণে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাসের গেটে অনেককে ঝুলতে দেখা গেছে। চৈত্রের গরমে ভিড় ও যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। অনেকে বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরেন। সারাদিন রোজা রাখার কারণে অনেকে তাও করতে পারেননি। যানজটে বসে ভোগান্তি নিয়েই অপেক্ষা করেন বাড়ি ফেরার।
এবার রমজানে সরকারি অফিসগুলোর সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা। মূলত অফিস শেষে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে বাসায় ফেরার তাড়া থাকে কর্মজীবীদের। যার চাপ পড়ে সড়কে। কারওয়ান বাজার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলনের খিলক্ষেতের বাসিন্দা আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করবো। তাই বাসায় যাচ্ছি। কিন্তু আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েও একটি বাসে উঠতে পারিনি। অনেক ভিড় আজকে। আবার যানজটের কারণে গাড়িও কম।
একই কথা বলেন বাসের জন্য অপেক্ষা করা আরেক যাত্রী নাজিমুল মালাইকা। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি একটি বাস নেই। বাস এলেও উঠতে পারবো কিনা সন্দেহ। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে হয়, যা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কিছু করার নেই। আবার এ জ্যামের কারণে ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারবো কিনা কে জানে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাক আহমেদ বলেন, অফিস ছুটির পর সবাই ইফতার করতে একসঙ্গে বাড়ির পথ ধরে। তার উপর বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস। যার ফলে সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে৷ কারণ রাস্তার ধারণক্ষমতার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। তারপরও কোথাও গাড়ি দাঁড়িয়ে নেই। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল আছে। পাশাপাশি রমজান ঘিরে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাই যেন ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর এ যানজট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ফুটপাত দখল, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে না চলা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপ্রশস্ত সড়ক, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল ঢাকাকে যানজটের নগরীতে পরিণত করেছে।
কালের আলো/আরআই/এমএইচ