উড়াল সড়ক খুলছে আজ যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

প্রকাশিতঃ 9:36 am | September 02, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

স্বপ্ন নয় সত্যি। এ যেন যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়কের যুগে প্রবেশ করছে রাজধানী। আজ দখিনা দুয়ার খুলছে উড়াল সেতুর। জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উড়াল সড়কের উদ্বোধন করবেন। ফলে মাত্র ১০ মিনিটে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চলে আসতে পারবে যে কোনো যানবাহন। সড়কে নগরবাসী পাবে স্বস্তির সুবাতাস। এদিন আংশিকভাবে চালু হচ্ছে এই উড়াল সড়কের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের। এই অংশে ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে ১৩টি খুলে দেওয়া হবে। বনানী ও মহাখালী র‌্যাম্প খুলবে আরও কিছুদিন বাদেই।

সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর একাংশ এখন যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত। র‌্যাম্পসহ উড়াল পথের এই অংশের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটিতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের ৫টি পয়েন্ট দিয়ে গাড়ি উঠতে ও নামতে পারবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। এর মধ্যে বিমানবন্দরে ওঠা ও নামার জন্য থাকবে একটি করে র‌্যাম্প। কুড়িলে ওঠার জন্য ২টি আর নামার একটি র‌্যাম্প রয়েছে। বনানীতে দুটি র‌্যাম্প ওঠার আর দুটি নামার এবং মহাখালীতে নামা যাবে দুটি র‌্যাম্প দিয়ে আর ওঠা যাবে একটি পথে। এ ছাড়া ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে নামার র‌্যাম্প একটি ও ওঠার র‌্যাম্প ৩টি। এক্সপ্রেসওয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি)। এতে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বহন করছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে গঠিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তিন ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ।

নির্মিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ মিনিটেই যাওয়া যাবে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত। ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ তুলবেন যানবাহন থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে। ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে ইতালি-থাই নামে বিদেশি কোম্পানি। এ জন্য তারা আলাদা টোল প্লাজা স্থাপন করেছে।

এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটারে চলাচল করা যানবাহনের কাছ থেকে চার ক্যাটাগরিতে টোল আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর মধ্যে প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, জিপ, ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল’, ১৬ সিটের কম মাইক্রোবাস এবং তিন টনের কম হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে টোল দিতে হবে ৮০ টাকা। ছয় চাকা পর্যন্ত মাঝারি ট্রাকের টোল ৩২০ টাকা ও ছয় চাকার বেশি ট্রাকের টোল ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ১৬ বা তার বেশি আসনের সব ধরনের বাসের টোল ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের শেষ ধাপে কমলাপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলি-নিমতলী-সিরাজদীখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে ঢাকা ও এর পাশর্^বর্তী অংশে যানজট দূর হবে। প্রকল্পের রুটগুলো হচ্ছে-শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)। তখন বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানান, এ প্রকল্পের প্রথম ধাপের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৯৮ শতাংশ। আজ শনিবার বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত উড়াল সড়কের ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে ১৩টি খুলে দেওয়া হবে। বাকি দুটি কিছু দিন পর খুলে দেওয়া হবে।

সচিব জানান, আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচন করার পর টোল দিয়ে পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে যাবেন। যেখানে সুধী সমাবেশে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য দেবেন। রোববার ভোর ৬টা থেকে এ পথ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে ওঠার ব্যবস্থা থাকবে। একদিকে নামা যাবে বনানী ও মহাখালী আর ফার্মগেটে। তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর এলাকায়।

সেতু সচিব বলেন, প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে এভাবে যোগাযোগব্যবস্থার সহজীকরণ এবং আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

কালের আলো/পিএম/এনএল