আসলেই কি ধর্ষণের মতো অপরাধ করেছেন শাকিব খান?

প্রকাশিতঃ 5:00 pm | March 17, 2023

শোবিজ ডেস্ক, কালের আলো:

ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ স্বয়ং তার নির্মাণাধীন সিনেমা ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর প্রযোজক রহমত উল্যাহর। বুধবার প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে এই প্রযোজক শাকিবের বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগও তুলেছেন।

কিন্তু সত্যি কি ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত শাকিব খান? নাকি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নেপথ্যে আছে অন্য কোনো কারণ? সামাজিক মাধ্যমে এমন প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছেন কিং খানের ভক্ত-অনুরাগীরা।

সম্প্রতি এফডিসির ১৯টি সংগঠনকে নিয়ে অত্যন্ত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন শাকিব খান। দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘অনেকে কাজ বাদ দিয়ে সমিতি নিয়ে পড়ে থাকে। এফডিসি হয়ে গেছে সমিতি-নির্ভর প্রতিষ্ঠান। কিছু অযোগ্য লোকের কাছে সিনেমার পরিবর্তে সমিতি হয়ে গেছে ধ্যান-জ্ঞান। সমিতির নির্বাচন, পিকনিক আর ইফতার পার্টি নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে সারা বছর।’

শাকিব খান আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে এফডিসিতে সমিতি নিয়ে হানাহানিতে সিনেমার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।’ ঢালিউড সুপারস্টার মনে করেন, ‘এসব সমিতি চর্চা না করে জরুরি ছিল এফডিসি থেকে সার্ভার সিস্টেমের মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শন করা। এফডিসিতে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের ব্যবস্থা করা। অথচ সবাই সমিতি নিয়ে ব্যস্ত। তাতে চলচ্চিত্রের বারোটা বেজেই চলেছে।’

কিং খানের এমন মন্তব্যের দুদিন না যেতেই তার বিরুদ্ধে উঠল অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের অভিযোগ। কাজেই সমিতি নিয়ে করা শাকিব খানের মন্তব্যের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শাকিব-ভ্ক্তরা মনে করছেন, সমিতি নিয়ে মুখ না খুললে তাদের প্রিয় তারকার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠতো না।

যদিও কিং খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। গত বছরের ২ অক্টোবর মিলি সুলতানা নামে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি সাংবাদিক তার ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে দাবি করেন, ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘সুপার হিরো’ ছবির শুটিং চলাকালীন এক নারী সহ-প্রযোজককে হোটেল রুমে ধর্ষণের অভিযোগে শাকিবের নামে মামলা হয়। তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পরে প্রভাব খাটিয়ে ছাড়া পান।

ওই নারী সাংবাদিক আরও লিখেছিলেন, শাকিবের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে ভুক্তভোগী নারী যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেই হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার ছিলেন তার স্বামী। স্ত্রীর চারিত্রিক স্থলন দেখে তিনি তাকে ডিভোর্স দেন। কিং খানের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি গোপনে তাকে প্লেনের টিকিট কেটে দেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে চম্পট দেন শাকিব।

এবার প্রযোজক রহমত উল্যাহ তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’

প্রযোজকের দাবি, ‘ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে ওই নারী এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঘটনার দিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তবে সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে ওই নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।’

ওই প্রযোজক এমন অভিযোগও করেছেন, ‘শাকিব খানকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিক বার। এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।’

অর্থাৎ, প্রবাসী সাংবাদিক মিলি রহমান ও প্রযোজক রহমত উল্যাহর অভিযোগ থেকে যেটা জানা গেল তা হলো- ২০১৮ সালে শাকিব খান যখন ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তখন অস্ট্রেলিয়াতে চলছিল কিং খানের ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির শুটিং। যেটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুটিং থেমে আছে বহুদিন ধরে।

একই বছর শাকিব খান যখন অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে দেশটির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বলে বলা হচ্ছে, তখন চলছিল কিং খানের ‘সুপার হিরো’ ছবির শুটিং। যেটির নায়িকা অভিনেতার দ্বিতীয় স্ত্রী শবনম ইয়াসমিন বুবলী। কিন্তু আসলেই কি ধর্ষণের মতো অপরাধ করেছেন শাকিব খান? অভিনেতা দেশের বাইরে থাকায় চেষ্টা করেও আপাতত এ বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি