রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনকে পছন্দের কারণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 7:40 pm | March 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার আগে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিষয়ে কোনো তথ্যই প্রকাশ্যে আসেনি। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে কাজটি করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অনেকের নাম আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুদকের সাবেক এই কমিশনারের নাম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। যাতে দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাও চমকে ওঠেন। কেন তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্ন এতদিন ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনীতির ভেতরে-বাইরে। অবশেষে তাকে পছন্দের কারণ ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে গণভবনে কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, সাহাবুদ্দিন সাহেব একজন পোড় খাওয়া মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধা। জিয়াউর রহমান তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। দীর্ঘদিন তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে চাকরি করেছেন। পরে বিএনপির সময় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি নিজেও এত প্রচার করতে চান নাই।

নতুন রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার (মো. সাহাবুদ্দিন) মাঝে দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম আছে। রাজনৈতিক সচেতনতা আছে। আমরা চাইব অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যেন হয়। কারণ গণতন্ত্রের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি।’

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট প্রকাশ করে।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ২৪ এপ্রিল থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা।

১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পাবনার পূর্বতন গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের পর সাহাবুদ্দিন রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর ভর্তি হন পাবনার অ্যাডওয়ার্ড কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন।

১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন। এরপর ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার চুপ্পু একাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত কমিশনের প্রধান ছিলেন।

২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি

Print Friendly, PDF & Email