শিক্ষায় বাণিজ্য বন্ধে কঠোর সরকার

প্রকাশিতঃ 10:46 am | January 18, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইচ্ছেমতো টিউশনসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ এবং আদায়ও অনেকটাই নিয়মে রূপ নিয়েছে। কোথাও টিউশন ফি ৩০০ আবার কোথাও ৩ হাজার। কোথাও আরো অনেক বেশি। ফলে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার বাড়তি ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় অভিভাবকদের। দীর্ঘ সময় যাবত চলে আসা এ বাণিজ্য বন্ধে সরকার নানা সময় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি এ অনৈতিক বাণিজ্য। টিউশন ফি বাণিজ্যের টুঁটি চেপে ধরতে টিউশন ফি নীতিমালার খসড়া করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন, বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণসহ মোট ২৬ ধরনের ফি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থ আদায় করতে পারবে না। আদায়কৃত অর্থও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা রাখতে হবে। খরচ করতে হবে নির্দেশনা মোতাবেক। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এই নীতিমালা পুরোপুরি কার্যকর হলে শিক্ষায় বাণিজ্য বন্ধ হবে। সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীরাও অর্থের অভাবে আর ঝরে পড়বে না।

জানা যায়, সরকার শিক্ষার উন্নয়নে নানা সুযোগ-সুবিধা দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন রকমের উচ্চ ফি’র কারণে শিক্ষা রীতিমতো ব্যয়বহুল। বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায় বন্ধে নির্দেশনা জারি করে সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। এ কারণে শিক্ষা আইনের খসড়ায়ও প্রতিষ্ঠানের ফি আদায়ে লাগাম টেনে ধরার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখা) সোনা মনি চাকমা বলেন, ‘শিগগিরই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হবে।’

সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি’র আদায়কৃত অর্থের বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং পরিচালনা কমিটি নানা কৌশলে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন। আদায়কৃত অর্থের জবাবদিহিতা তৈরিতে এই নীতিমালা করা হবে। এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি ও বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণ ফিসহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নীতিমালাটি হচ্ছে।

টিউশন নীতিমালার মাধ্যমে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে চলছে শিক্ষা বাণিজ্য। টিউশন নীতিমালা করলে এটা বন্ধ হবে বলে আমরা শিক্ষানীতির কথা বলেছি। এখন যদি তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ হতে পারে।’

খসড়া নীতিমালায় দেখা যাচ্ছে, মহানগর ও মফস্বলের স্কুল-কলেজের জন্য আলাদা টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর দুটি ভাগ রয়েছে। একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যটি নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে, নবম-দশম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। আর নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, নবম-দশম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। কলেজ পর্যায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিকে মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, স্নাতক-পর্যায়ে এটা হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। আর নন-এমপিওভুক্ত হলে উচ্চমাধ্যমিকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা, স্নাতক পর্যায়ে এটা হবে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা।

এছাড়া নীতিমালায় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, টিফিন, ম্যাগাজিন, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, লাইব্রেরি, পরিচয়পত্র, নবীনবরণ, শিক্ষাসফর, উন্নয়ন ফি ইত্যাদি খাতে কত টাকা নেওয়া যাবে সে বিষয়টিও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ ফি সর্বনিম্ন ৫ টাকা, সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। নীতিমালায় রসিদ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিধানের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email