আমার শিল্পীজীবনে তৃষ্ণা আছে, অতৃপ্তি নেই : রুনা লায়লা

প্রকাশিতঃ 10:48 am | November 17, 2022

শোবিজ ডেস্ক, কালের আলো:

বাংলাদেশের সংগীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার ৭০তম জন্মদিন আজ (১৭ নভেম্বর)। এখনও তাঁর অনন্য গায়কী সংগীতপিপাসুদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে তিনি পেয়েছেন সবশ্রেণির জনপ্রিয়তা। তিনি তারকাদের তারকা। তাঁর তুলনা শুধুই তিনি।

চার বছর বয়সেই নাচ শিখতেন রুনা লায়লা, গানের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ বা ভালবাসা গড়ে ওঠেনি তখনও। বড় বোন দীনা লায়লাকে গান শেখাতে যে ওস্তাদ আসতেন, তাঁর সামনেই খেলার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে বসে যেতেন বোনের সাথে। সেই ওস্তাদজিই একদিন তাঁর মাকে জানালেন তাঁকে গান শেখানোর কথা। প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে ঐটুকু বয়সেই যে কোন গান তুলে মুখস্থ করে ফেলতেন অনায়াসেই। আর সঙ্গে ছিল তাল লয় আর সুরের জ্ঞান।

এইসব গুণেই শিশু রুনা লায়লার মাঝে আগামীর শিল্পীর সম্ভাবনা হয়তো দেখেছিলেন সেই সংগীত শিক্ষক। তবে, মেধাবী হলেও শৈশবে প্রচণ্ড ফাঁকিবাজ ছিলেন বলে দাবি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা এই কণ্ঠসম্রাজ্ঞীর।

গান শেখা শুরু করার পর কখন যে এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস হয়ে উঠেছিলেন তা নিজেও টের পান নি। খুব কম বয়সেই প্লেব্যাকের মাধ্যমে অল্পদিনেই খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন রুনা লায়লা। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ও মা আমেনা লায়লার দ্বিতীয় সন্তান রুনা লায়লা ক্রমেই হয়ে ওঠেন উপমহাদেশীয় সংগীত জগতের এক বিস্ময়কর নাম।

প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। রুনা লায়লাই সম্ভবত একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমান ভাবে জনপ্রিয়।

এই খ্যাতি দারুণভাবে উপভোগও করেন তিনি। ভক্তদের ভালবাসাতেই আজ তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। শ্রোতাদের জন্যই তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তী রুনা লায়লা। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শুধু গানই নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন রুনা লায়লা।

নিজের ৭০তম জন্মদিনে জানালেন, শিল্পীজীবনে তৃষ্ণা থাকলেও অতৃপ্তি নেই। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার জীবনে প্রাপ্তিটাই বেশি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশেও অনেক সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি। এটি সত্যিই অকল্পনীয়। আমার নিজেরও মাঝেমধ্যে অবাক লাগে, এটি কি আমাকে নিয়েই হচ্ছে! দেশের সাধারণ মানুষের অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাচ্ছি; যা আমার পাওয়া ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করি। এখনও গান করছি। আমার শিল্পীজীবনে তৃষ্ণা আছে, অতৃপ্তি নেই।’

রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘ব্যর্থতা আমার জীবনে খুব একটা আসেনি। এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। গান গাওয়ার জন্য কখনও কাউকে তোষামোদ করতে হয়নি; বরং যত দিন গড়িয়েছে, আমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতেও যে ক’দিন গান করি, মানুষের আগ্রহ যেন থাকে। গানের মাধ্যমেই আমি আমার জীবনকে উপভোগ করি।’

নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘এবার ব্যক্তিজীবনে ৭০ বছরে পা দিচ্ছি। কিন্তু মনেপ্রাণে আমি এখনও ১৭, আমি সবসময় বিশ্বাস করি, মানুষের দেহের বয়স বাড়ে, মনের বয়স কখনও বাড়ে না। তাই তো আমার কাছে বয়স শুধু একটা সংখ্যা মাত্র। মনের বয়স কখনোই বাড়তে দিই না। সবকিছুতে আসলে মনের জোরটাই বেশি দরকার।’

‘এবার জন্মদিন আমার পাশাপাশি পরিবারের সবার জন্যও বিশেষ। অনেকদিন আগে থেকেই তা নিয়ে চলছে নানা পরিকল্পনা। সত্যি বলতে কি, প্রতি বছর জন্মদিন এলে মনে পড়ে মা-বাবার কথা। বড় বোন দীনার কথা। হয়তো সবাই থাকলে জীবনের এই দিনটি আরও বিশেষায়িত হতো। তারপরও যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়েই ভালো থাকাটা জরুরি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, সুস্থ আছি। সবাই দোয়া করবেন যেন আগামীদিনেও আল্লাহ ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’

একটি কথা প্রচলিত আছে- ‘রুনা লায়লা মানে বাংলাদেশ’। এই বিষয়টি আপনাকে কতটুকু পুলকিত করে? উত্তরে এই জীবন্ত কিংবদন্তি বলেন, “আমি বাংলাদেশের মেয়ে, এটিই আমার কাছে অনেক গর্বের বিষয়। আমার মাতৃভাষা বাংলা- এটিও আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। যখন বিদেশের মাটিতে স্টেজ শোর জন্য পা রাখি, মঞ্চে ওঠার আগে যখন উপস্থাপক আমার নাম ঘোষণা করেন, তখন আমি বলে দিই- এভাবে বলেন, ‘রুনা লায়লা ফ্রম বাংলাদেশ’। বাংলাদেশকে বিশ্বে আমার কারণে, আমার গানের কারণে যতটা পরিচিতি করে তোলা যায় সেটি তো আমারই গর্বের বিষয়। আবার দেশের বাইরে যখন এ দেশের গান নিয়ে কথা বলি, তখনও ভালো লাগায় মন ভরে যায়।”

শুধু গানই নয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন আইকনও তিনি। তাঁর সাজসজ্জা, পোশাক, গাওয়ার ভঙ্গি থেকে শুরু করে সবই অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্ম। রুনা লায়লা নিজেও তরুণদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তরুণদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘সুযোগ দিলেই তরুণরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। এ জন্য সবার উচিত তাদের কথা ভাবনায় রাখা। জানি না, কেন আমাদের এখানে অনেকে নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভয় পায়। ওদের সুযোগ না দিলে প্রমাণ করবে কীভাবে? আমিও বলি, ওদের দিয়ে গাওয়ান। ওদের তৈরি করতে হবে। সে জন্য যতটা পারি তরুণদের খোঁজ নিই। গানের বিষয়ে পরামর্শ দিই। আর সুরকার হিসেবে যখন কাজ করছি, তখন গুণী শিল্পীদের নিয়ে যেমন কাজ করেছি, তেমনি নতুন শিল্পীদের নিয়েও কাজ করছি।’

সবশেষে জানতে চাই আপনাকে শিল্পী হিসেবে না পেলে কীভাবে পেতাম? উত্তরে রুনা লায়লা বলেন, ”আমাকে শিল্পী ছাড়া আর কোনোরূপেই পাওয়া যেত না। আমি মনে করি, আমার জন্মই হয়েছে গানের জন্য। গান ছাড়া আমি আর কিছুই পারি না। শিল্পী, শিল্পী এবং শিল্পী-এর বাইরে আর কিছুই নই। আর আমার গানের মতোই বলতে চাই- শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো/তোমাদেরই মন ভরাবো/শিল্পী হয়ে তোমাদেরই মাঝে চিরদিন আমি রবো।”

উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তির জন্মদিনটি বরাবরের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে উদযাপন করবেন তাঁর অগুনতি ভক্ত। একইভাবে এবারের জন্মদিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে চ্যানেল আই।

জানা গেছে, জন্মদিনে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে এবং রুনা লায়লার প্রতি বিশেষ সম্মান জ্ঞাপন করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে নতুন একটি গান। যেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লার চার অনুসারী। তাঁরা হলেন- কোনাল, ঝিলিক, মেজবাহ বাপ্পী ও তরিক মৃধা। তাঁরা প্রত্যেকেই উঠে এসেছেন চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠের মঞ্চ থেকে।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email