এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কারী ছিলেন চন্দন কুমার : র‍্যাব

প্রকাশিতঃ 4:04 pm | September 12, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায়কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, চন্দন ভারতে পালিয়ে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভুয়া নাগরিকত্ব ও আধার কার্ড করে সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। ভারতে অবস্থান করেই সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন চন্দন।

সম্প্রতি মাদক সংক্রান্ত কাজে তিনি কিছুদিন ধরে সাতক্ষীরায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন বলে জানতে পারে র‌্যাব। এই তথ্যের ভিত্তিতে ভোমরায় অভিযান চালিয়ে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার চন্দনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খানের পরিকল্পনাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। আবদুল কাদের খান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

র‌্যাব বলছে, ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও সংসদ সদস্য হওয়ার লোভে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আবদুল কাদের খান।

গ্রেফতার চন্দন কুমার রায় সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে লিটনের সমর্থিত লোকজনের সঙ্গে তার মারামারির ঘটনা ঘটেছিল।

চন্দন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, লিটনের প্ররোচনায় একটি মামলার আসামি দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করানো হয়। এ মামলায় ১৯ দিন কারাভোগ করেন চন্দন।

এরপর তার বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে লিটনের সহযোগিতা চেয়েছিলেন চন্দন। কিন্তু লিটন তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হন চন্দন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরবর্তীতে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালে চন্দনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন লিটন। পরবর্তীতে আবদুল কাদের খানের পিএস শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয় হয় চন্দনের। সেই সূত্র ধরে আবদুল কাদের খানের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয় তার।

এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চন্দন প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন বলে জানায় র‌্যাব।

লিটন হত্যাকাণ্ডের আগে মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও গাড়িচালক হান্নান অস্ত্র চালানো ও হত্যার পর দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ নেন।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে লিটনের ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার তথ্য পান চন্দন। এসময় আসামিরা মাঝপথে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এমপি লিটন রাজধানীর গাবতলী এসে ফিরে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে একই বছরের ডিসেম্বরে তারা লিটনকে নিজ বাড়িতেই হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর লিটনের চাচাতো ভাই সুবল এবং চন্দন বাড়িতে অবস্থান নেন। আর লিটন কখন কী অবস্থায় থাকেন এ তথ্য হত্যাকারীদের দিতে থাকেন।

ওইদিন বিকেলে চন্দন হত্যাকারীদের জানান, লিটন তার নিজ বাড়িতে একা অবস্থান করছেন। এরপর শাহীন, রানা ও মেহেদী মোটরসাইকেলে করে লিটনের বাড়ি যান। সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় লিটনকে।

র‌্যাব জানায়, চন্দন কুমার রায় ২০১০ সালের দিকে রাজধানীর একটি অনলাইন পোর্টালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দুই বছর সাংবাদিকতা করার পর গাইবান্ধায় ফিরে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় রাজনীতিতে।

নিহত লিটন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম

Print Friendly, PDF & Email