‘গর্বিত বোধ’ করেন প্রধানমন্ত্রী, পেশাদারিত্বেই কঠিন সব চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ এসএসএফ

প্রকাশিতঃ 11:08 pm | June 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে কেটে গেছে ৩৬ টি বছর। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় জল গড়িয়েছে অনেক। দীর্ঘ সময়ে ভারী হয়েছে স্মৃতির মলাট। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং ভিভিআইপি বিদেশি সম্মানিত অতিথিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পা রেখেছে গৌরবময় ৩৭ বছরে।

আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এসএসএফ’র ডিজি

বুধবার (১৫ জুন) উদযাপিত হয়েছে কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও আনুগত্যের মাপকাঠিতে বারবার কঠিন সব চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ আধুনিক ও সুসজ্জিত এই নিরাপত্তা বাহিনীটির ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ওইদিন সকালে নিজ কার্যালয়ে এসএসএফ’র ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সশরীরেই যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি এসএসএফ সদস্যদের সততা, দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার আবারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজের মুখেই বলেছেন তিনি নিজেও গর্ববোধ করেন এই বাহিনীর পারদর্শিতা দেখে।

আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, বাহিনী প্রধানদের ধন্যবাদ ডিজি’র

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরসহ সবার নিরাপত্তায় কাজ করে যাওয়ায় তাদের জন্য সব সময় ‘দোয়া’ করেন হ্যাটট্রিক এই সরকারপ্রধান। বলছিলেন ঠিক এমন ‘আমি আমার ছেলে-মেয়ের জন্য যেমন দোয়া করি, নাতি পুতির জন্য যেমন দোয়া করি, তেমনি ঠিক সেই রকমভাবে আমার সাথে যারা কাজ করেন, প্রত্যেকের জন্য আমি দোয়া করি।’

‘এসএসএফের জন্য বিশেষ করে দোয়া করি। যেন আমার কারণে যেন কেউ কোনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা আমার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সব সময় আমি চিন্তায় রাখি’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব বিদেশি অতিথি আসেন, তারা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি নিজেও এই বাহিনীর পারদর্শিতা দেখে ‘গর্ব বোধ করি। কাজেই, এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে, পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশপাশি চারিত্রিক দৃঢতা, সততা শৃঙ্খলা সবকিছু মেনেই চলতে হবে। আমাদের এসএসএফ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।”

প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (পিএসএফ) হিসেবে ১৯৮৬ সালে যাত্রা শুরু করে এই বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিট এখন কালের বিবর্তনে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং ভিভিআইপি বিদেশি সম্মানিত অতিথিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়ে নামকরণ হওয়া এসএসএফ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।

৮ বছর আগে এসএসএফ’র ২৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এসএসএফ’র উন্নয়নে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তার সরকার একটি আধুনিক ফায়ারিং রেঞ্জের পদক্ষেপ নিয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের জন্য আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়।’

তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘২০১৩ সালে এসএসএফকে ইনসিগনিয়া (বিশেষ ব্যাজ) প্রদান করা হয়, যা এসএসএফকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাহিনীতে উন্নীত করে এবং পর্যায়ক্রমে এই বাহিনীর জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।’

এসএসএফ সদস্যদের কর্তব্যপরায়ণতা, আন্তরিকতা ও কর্মদক্ষতায় বরাবরই নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি অতিথিরাও এসএসএফের আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন এটিও বলেছেন। তিনি এই নিরাপত্তা বাহিনীটির সদস্যদের নিজের সন্তানের মতোই আদর, স্নেহ করেন।

সেই বিষয়টিও ফুটে উঠেছিল বছর দুয়েক আগে এসএসএফ’র ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ওইবার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তোমরা নিরাপদ থাক, সেটা সব সময় আমার চিন্তা। তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আমাদের সবার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য তোমরা যেভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ কর, তোমাদের আন্তরিকতায়, তোমাদের কর্মদক্ষতায় আমরা সত্যি মুগ্ধ।

যে বিষয়ে এসএসএফকে খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) যেন সরকারপ্রধানকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে, সে বিষয়ে এই বাহিনীর সদস্যদের খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’র অনুষ্ঠানে তিনি জনগণের সঙ্গে না মিশলে একজন রাজনীতিকের অবস্থা ‘জলের মাছ ডাঙায় ওঠার’ মত অবস্থা হয় মন্তব্য করে সব সময় জনগণের সঙ্গে থাকার প্রত্যাশার কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের সাথে একটু কথা বলা, জনগণের সাথে একটু মেশা, এটাই একমাত্র কাজ। এটাই আমাদের শক্তি। আর কোনো শক্তি কিন্তু নেই। এই জনগণই আমাদের প্রাণশক্তি। তাদের জন্যই রাজনীতি। কাজেই আমি শুধু ওইটুকু চাই যে, মানুষ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না হই বা মানুষ যেন আমার কাছে আসতে কোনো আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিরোধী দলে যখন ছিলাম, মানুষকে কী দিতে পেরেছি, একটু কথা, একটা আস্থা বা মানুষের বিশ্বাস অর্জন। সেই জনবিচ্ছিন্ন যেন না হয়ে পড়ি, এটা একটু দেখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীত্ব নিজের কাছে ‘ভোগের কোনো বস্তু নয়’ মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫৪ সালে মন্ত্রী ছিলেন, এরপর ৫৬-৫৭ পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু পাঁচ ভাই-বোন কখনোই ক্ষমতা ভোগ করার কথা কখনো চিন্তাই করিনি। এটি বাবা-মায়ের নির্দেশ ছিল।’

দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার পরও জীবন যাপনের ধরনে কোনো ‘পরিবর্তন হয়নি’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে একটাই ক্ষমতা, জনগণের জন্য কাজ করব, জনগণের কল্যাণ করব, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করব। যেটা আমার বাবা শিখিয়েছেন, মা শিখিয়েছেন, সেটাই আমরা করব।

‘কাজেই, আমি শুধু ওইটুকু চাই যে, মানুষ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না হই, বা মানুষ যেন আমার কাছে আসতে যেয়েৃ কষ্ট না পায়, সেদিকে একটু সবাইকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমার অনুরোধ থাকবে…। এইটুকুই চাই, নইলে শেষে আমরা ওই যে জলবিহীন মাছের মতো নিজে কষ্ট পাব।’

অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস ও এসএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মজিবুর রহমান। এসএসএফ মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যও রাখেন।

কালের আলো/বিএসবি/এমএম