গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়ল, গ্রেপ্তার ১৬৪ জন

প্রকাশিতঃ 11:28 pm | July 18, 2025

গোপালগঞ্জ প্রতিবেদক, কালের আলো:

গোপালগঞ্জে জারি করা কারফিউয়ের সময়সীমা শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গত বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে এই কারফিউ কার্যকর হয়।

তবে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এসময় সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যার যার বাসায় ফিরে যান, ফলে শহর ফের ফাঁকা হয়ে পড়ে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার জেরে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয় কারফিউ। এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানা থেকে ৪৫ জন, মুকসুদপুরে ৬৬ জন, কাশিয়ানীতে ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়ায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) জানান।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলা, মারধর ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাস বাদী হয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মোট ৫৭৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ১৬ জুলাই সকালে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের উলপুর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা পুলিশ সদস্যদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাসসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।

এদিকে দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে নদীপথেও টহল জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী নদীপথে নজরদারি শুরু করেছে।

নৌবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট সাজ্জাদ এবং কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী সূত্র জানায়, দুষ্কৃতিকারীরা যাতে নদীপথ ব্যবহার করে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য জেলার নদীপথে চলছে বিশেষ টহল, তল্লাশি ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এনসিপির পথসভা শেষে গাড়িবহরে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন মারা যান। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিকশাচালক রমজান মুন্সি (৩৫) মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে।

কারফিউ শিথিলের তিন ঘণ্টায় শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় ছিল ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র চলাচল। রাস্তায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলও দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ছুটেছেন গন্তব্যে। কিছু দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ দোকান এবং মার্কেট বন্ধ ছিল।

অব্যাহত অস্থিরতায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ফল ও সবজি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

জেলা শহরের বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, কারফিউয়ের কারণে দোকান খুলতে না পারায় তিনদিনে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল পচে গেছে। শুক্রবার ৩ ঘণ্টার জন্য দোকান খুললেও তেমন বিক্রি হয়নি। বাকি ফলগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।

কালের আলো/এএএন