যেভাবে আইজিপি পদটি ড.জাবেদ পাটোয়ারী’র

প্রকাশিতঃ 8:29 am | January 26, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:

সব প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে অবশেষে নিয়োগ পেয়েছেন বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। সক্রিয় একটি প্রতিপক্ষ তাঁর বিষয়ে নানা রকম ‘খিস্তিখেউর’ করলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্ণ আস্থা রেখেছেন পুলিশ প্রশাসনে স্বচ্ছ ইমেজের, মেধাবী ও পেশাদার এ কর্মকর্তার ওপর।

ষষ্ঠ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া ড.জাবেদ পাটোয়ারী বিদায়ী আইজিপি এ.কে.এম.শহীদুল হকের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্ত বিভাগের পুলিশ-১ অধিশাখা থেকে একটি প্রজ্ঞাপনে তাকে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই নিয়োগ আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

এর আগেও কয়েক দফা মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে উচ্চারিত হয়েছিল ড.জাবেদ পাটোয়ারীর নাম। বরাবরই তাকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা থাকায় ভেতরে ভেতরে সক্রিয় ও সোচ্চার হয়ে উঠে প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী। ফলে বিলম্বিত হয় তাঁর পুলিশ প্রধান হওয়ায়। কিন্তু একদিন না একদিন তিনি দেশপ্রেমিক বাহিনীর এ শীর্ষ পদটিতে আসীন হবেন এমন বিশ্বাস ছিল অনেকেরই। এবারো তাঁর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আরো কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন প্রতিযোগী।

সূত্র মতে, সপ্তাহ তিনেক আগে ‘মনগড়া’ অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ক’জন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের কোন অভিযোগ কানে তুলেননি। উল্টো স্পষ্ট তাদের জানিয়ে দেন জাবেদ পাটোয়ারীর প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থার কথা। সুবিধা করতে না পেরে প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী হতাশ মনে ফিরে আসেন। তখনই স্পষ্ট হয়ে উঠে চাঁদপুরের সন্তান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীই পরবর্তী পুলিশ প্রধান হতে চলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী জাবেদ পাটোয়ারী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি। ১৯৮৪ ব্যাচের এ কর্মকর্তা চাকরিতে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে বর্তমানে পুলিশের সর্বোচ্চ পদের এক ধাপ নিচে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে কর্মরত।

তাঁর চাকরির মেয়াদ ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এসবির পদটি গ্রেড-১ পদ। তিনি ষষ্ঠ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন। এছাড়া সমন্বিত মেধাতালিকায় তিনি চতুর্থ ছিলেন।

আরও পড়ুন: জাবেদ পাটোয়ারী আইজিপি, উচ্ছ্বাসের জোয়ার ইলিশের রাজধানীতে!

নয়া পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর জন্ম চাঁদপুর সদরের মান্দারী গ্রামে। এর আগেও কয়েক দফায় আইজিপি হিসেবে তার নাম আলোচনায় ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবনের ওপর লেখা গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে জাবেদ পাটোয়ারী বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এসবির রেকর্ড রুমে বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে ৬৬ হাজার ক্লাসিফাইড গোয়েন্দা তথ্য সংরক্ষিত আছে। জাবেদ পাটোয়ারী এসবির শীর্ষ পদে আসার পর গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলাদি বিশেষভাবে সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেন। তাঁর এ ভূমিকায় সন্তুষ্ট হন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যরা।
ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিয়োগ অনুমোদন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান এমন খবর প্রকাশিত হয় মিডিয়ায়। এ নিয়ে কালের আলোও প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন সুদান, কসোভো, সিয়েরালিয়ন ও ক্রোয়েশিয়ায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এর আগে অতিরিক্ত আইজি সিআইডি, পুলিশ সদর দপ্তর ও খুলনার পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন জাবেদ পাটোয়ারী।

জাবেদ পাটোয়ারী প্রচারবিমুখ ও মৃদুভাষী কর্মকর্তা হিসেবে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত পুলিশে চাকরি করে আসছেন। এসবির প্রধান হিসেবে বর্তমান পদে একটানা ৯ বছর কর্মরত আছেন। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি এসএসসিটির দায়িত্ব পালন করেন।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জাবেদ পাটোয়ারী। তার সংস্থার দেয়া গোয়েন্দা তথ্যে বড় বড় বেশ কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর মধ্যে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার ছিল অন্যতম। জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জাবেদ পাটোয়ারী দু’বার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পুলিশ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেলপ্রাপ্ত হন। তার দক্ষ, বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে স্পেশাল ব্রাঞ্চ অনন্য এক উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছে।

আরও পড়ুন: ছাত্র হলেন আইজিপি, আনন্দাশ্রু শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টারের চোখে!

আরও পড়ুন:- প্রধানমন্ত্রীর স্নেহ ও আস্থা নিয়েই কাজ করতে চান সাজ্জাদুল হাসান

 

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email