সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স উঠিয়ে দেশীয় শিল্প রক্ষা করা প্রয়োজন : এফবিসিসিআই সভাপতি

প্রকাশিতঃ 10:43 am | June 03, 2021

বাণিজ্য সংবাদদাতা, কালের আলো:

করোনায় শুধু বাংলাদেশ-ই নয়, বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব অর্থনীতি। এ অবস্থায় দেশীয় শিল্প রক্ষার জন্য সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স উঠিয়েদেওয়ার মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি জসিম উদ্দিন।

বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ২০২১-২৩ মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। ব্যবসায়ীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কালের আলো’য় তা প্রকাশ করা হলো।

করোনাকালের সংকট থেকে উত্তরণে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট কেমন হওয়া উচিত?- এমন প্রশ্নে জসিম উদ্দিন বলেন, কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বড় বড় ধনী দেশও করোনার শিকারে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা ও সময়োপয়োগী সিদ্ধান্তে তুলনামূলকভাবে আমরা অনেকের চেয়ে ভালো আছি। করোনার প্রথম বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ায় প্রথম ধাপ মোকাবিলা অনেক সহজ হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ায় বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প ও ভারী শিল্পের মূলধনের ঘাটতি অনেকটাই মিটেছে। অনেকের জন্য প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সহজ হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়; কিন্তু এ খাতের উদ্যোক্তারা এখনো সঠিকভাবে পাননি।

তিনি বলেন, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজেটে এমন কোনো বিষয় রাখা উচিত হবে না, যার প্রভাবে অভ্যন্তরীণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি মনে করি, শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে যে অগ্রিম ভ্যাট কাটা হয়, সেটি কর্তৃপক্ষ ফেরতও দেয়। যে টাকাটা ফেরত দেবে, সেটি নেবে কেন? এটা নিলে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এই টাকা পেতে অনেক দিন লেগে যায়।

এফবিসিসিআই-এর কথা উল্লেখ করে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি- অগ্রিম ভ্যাট-ট্যাক্স উঠিয়ে দিতে। দেশি শিল্পগুলোকে সাপোর্ট দেওয়া দরকার। কৃষি খাতের অনেক মেশিনারিজ আছে, যা আমদানি করতে টার্নওভার ট্যাক্স ৫০ শতাংশের জায়গায় ২ শতাংশ করা যেতে পারে। তা হলে অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষিজাত পণ্যের দামও কমে যাবে।

শিল্প-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বাজেটে অগ্রাধিকার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মোটামুটি সবাই কম-বেশি ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। আমি সবসময় বলছি, দেশি শিল্পের ব্যাপারে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। শিল্পে দুটি বিষয় জড়িত- প্রথমত- কর্মসংস্থানের জোগান দেয়; দ্বিতীয়ত- রাজস্ব আদায় এ খাত থেকেই আসে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) দেশের অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। অনেক এসএমই বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক (ট্যাক্স) কাঠামো ঠিক করা দরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিনই দাম ওঠানামা করে। দেখা যায়- যে দিন দাম বেড়েছে ওই দিনের দাম নির্দিষ্ট করে রাখা হয়; কিন্তু পরে যে দাম কমেছে, সে হিসাব আর রাখা হয় না। ওই বাকি দামের ওপর ট্যাক্স বসানো হয়। রাজস্ব দরকার। আমি মনে করি যেনতেনভাবে রাজস্ব আদায় ঠিক হবে না।

‘দেশি শিল্পগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বিদেশি পণ্য ইনভয়েস করে বিভিন্নভাবে নিয়ে আসেন। এখান থেকে বের হতে হলে অবশ্যই নানা ধরনের কৌশল নিতে হবে।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত দেশি শিল্পরক্ষায় অনেক কৌশল নিয়েছে; কিন্তু আমাদের এনবিআর, ট্যারিফ কমিশনের সেই কৌশলগুলো বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই। আমি মনে করি সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স উঠিয়ে দেশি শিল্প রক্ষা করা দরকার।’

এসএমই রক্ষায় বাজেটে সহায়তা প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত (এসএমই) প্রায় ৩৫ শতাংশ অবদান রাখছে। মানুষের কর্মসংস্থান থেকে এ খাতে কোনো কিছুই বাদ নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক) খাত অনেক বড়। এদের ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। যদিও এর পুরোটা এখনো বিতরণ সম্ভব হয়নি। কেন পারেনি, এই জায়গাটায় কাজ করবো আমরা। এদের সম্পৃক্ত করা খুবই দরকার। সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর যে নেটওয়ার্ক, তারা এই পর্যায়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশে অনেক কম ব্যাংক আছে, যারা এসএমই নিয়ে কাজ করে।

এক্ষেত্রে সারাদেশে যে ব্যবসায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে- সেগুলো কাজে লাগানোর কথা জানান তিনি।

আসন্ন বাজেটে ভারী শিল্পের উন্নয়নে করপোরেট ট্যাক্স কমানো প্রয়োজন উল্লেখ এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভারী শিল্পে করপোরেট ট্যাক্স কমানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে তাদের যেহেতু মূলধন বেশি লাগে; সেক্ষেত্রে অগ্রিম ভ্যাট, কাঁচামাল আমদানিতে যে ট্যাক্স দিতে হয়, এসব উঠিয়ে দেওয়া দরকার। অগ্রিম ভ্যাট দেওয়ার কারণে তাদের পুঁজি বেশি লাগে। ব্যাংকে সুদ দিতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী সক্ষমতা হারাচ্ছে। যেহেতু সরকার টাকাটা ফেরত দিচ্ছে, তা হলে নেওয়ার কী দরকার? আমি মনে করি করপোরেট ট্যাক্স কমানোর পাশাপাশি অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স কমালে তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হবে।

করোনায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে জসিম উদ্দিন উদ্দেন বলেন, এখানে কারও হাত নেই। এটা তো কোনো সরকারের জন্য হয়নি। আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে। এতে সবাই ভুগছেন। তবে সরকার কতটুকু সহযোগিতা করছে এটাই কথা। সরকারের সহযোগিতা করার মানসিকতা আছে; কিন্তু সমস্যা বাস্তবায়নের। দেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। সেখানে দাম বাড়ার কারণ করোনা। যেহেতু মানুষকে সরকারের খাওয়াতে হবে। সেজন্য ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো দরকার। যেমন সয়াবিন তেলের অনেক দাম বেড়েছে। সয়াবিন তেল আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক উঠিয়ে দেওয়া হলে তো অনেক টাকা। দেশীয় বাজারে তেলের দাম এমনিতেই কমে যাবে।

কালের আলো/এসজে/এএম