দ্বিগুণ হলো বৈদেশিক বিনিয়োগ
প্রকাশিতঃ 3:49 pm | July 11, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
এই বছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ (নেট এফডিআই) হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় এটি দ্বিগুণের চেয়ে একটু বেশি।
আর অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে এফডিআই এসেছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা গত সরকারের আমলের শেষ ছয় মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৮৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২.৪০ টাকা হিসাবে)। যা আগের বছরের একই সময়ের দ্বিগুণ। আগের বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে নেট বিনিয়োগ হয়েছিল ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ছিল ৪ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
আগের বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছিল ৪৯ কোটি ৪ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার ২ কোটি টাকা।
এই সময়ের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে বর্তমান সরকারের তৎপরতার ফল বলছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সরকারের ভিশন ও বিডার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এই বছরের এফডিআই আসার পেছনে আমাদের ভূমিকা সামান্য। বিনিয়োগের ডিসিশন আগেই হয়েছিল। সম্ভবত প্রসেস একটু গতিশীল হয়েছে। যেমন, বিডা ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অনেক দ্রুত বৈদেশিক ঋণগুলোকে ভিন্নকরণ ও অনুমোদন করছে (স্ক্রুটিনি ও অ্যাপ্রুভ করছে)। ’
আর এ কারণেই বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি বেড়েছে, বাড়ছে বিনিয়োগের পরিমাণ। গত সরকারের সময়ে এমন ছিল না।
বিডার চেয়ারম্যান উড়িয়ে দেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমছে-এমন ধারণা। দুই মাস আগে বৈদেশিক বিনিয়োগের তথ্য নিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদকে উল্লেখ করে একটি খবর প্রকাশিত হয়। শুক্রবার (১১ জুলাই) বৈদেশিক বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিত্র তুলে ধরে তিনি এ নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় মাস দুই আগে একটা কার্টুনসহ রিপোর্ট করা হলো, একই সময়কে ফ্রেম করে। পড়ে মনে হচ্ছে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া, সামিট আর প্রেজেন্টেশন করা ছাড়া আমরা কিছু করি না। আর তাই বিনিয়োগ ধ্বংস, অর্থনীতি ধ্বংস, দেশ ধ্বংস, ইত্যাদি। প্রভিশনাল বা প্রস্তাবিত ডেটা নিয়ে এরকম একটা নেগেটিভ রিপোর্ট করে পাবলিককে সেনসিটাইজ করাটা দুঃখজনক। এমনিতেই বাংলাদেশে ডেটা নিয়ে অনেক কনফিউশন। তার ওপর এইসব অপসাংবাদিকতা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমার গত আট মাসে কয়েকজন দারুণ রিপোর্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তারা স্ট্রেইট কাট প্রশ্ন করেন। রিপোর্ট করার আগে বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করেন। অন্যরা তাদের মতো হলে খুব ভালো হতো। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবর-মার্চ ছয় মাসের বৈদেশিক বিনিয়োগের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগের সরকারের সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে শুধু টাকার পরিমাণেই নয়, গুণগত মানেও বিনিয়োগ বেড়েছে। অক্টোবর-মার্চ সময়ে ইকুইটি, রি-ইনভেস্ট এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ আনুপাতিক হারে বেড়েছে।
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মতে, আগের সরকারের সময়ে অস্থিতিশীল রাজস্ব নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে পরিকল্পনা ধীরে করতেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বড় সমস্যা ছিল। এসব বিষয়ে বিশেষ করে সরকারের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা হতো না। যার কারণে বিনিয়োগে গতি কমে যাচ্ছিল। নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে পাইপলাইনে থাকা বিনিয়োগগুলো দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে।
কালের আলো/এএএন