বাংলাদেশ সারা বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত : পিএসও

প্রকাশিতঃ 11:31 pm | May 28, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। বুধবার (২৯ মে) ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সাথে ২৯ মে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪’ পালন করা হচ্ছে জেনে নিজের আনন্দের কথা জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী দপ্তরের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত এ বিশেষ দিবসটি উপলক্ষ্যে আমি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যকে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় তাঁদের অসামান্য অবদানের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ‘Fit for the future, building better together’ এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছরের ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪’ পালিত হচ্ছে যা সাম্য, ন্যায়নিষ্ঠ, টেকসই ও উন্নত বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে সম্মিলিত চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বাংলায় তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানিক দিক নির্দেশনায় পরিচালিত হয়ে নিপীড়িত মানুষকে সহযোগিতা করার মহান ব্রত নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ স্বগৌরবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। এছাড়াও বীর বাঙ্গালী জাতি ১৯৭১ এর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধকালীন এক পাশবিক গণহত্যা, নিপীড়ন, বাস্তুচ্যুতি এবং সর্বোপরি মানবিক সংকটের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পাশে দাড়াঁতে অনুপ্রাণিত করে। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী, দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সুনাম আজ সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের উন্নত পেশাদারিত্ব, অসীম সাহসিকতা এবং অনবদ্য অবদানের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিশ্ব বরেণ্য নেতৃবৃন্দের ভূয়সী প্রশংসা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষায় সুদীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতিসংঘের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বর্তমানে ১৩টি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৭২৮ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩৬৪ জন সদস্য নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪৩টি দেশের ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে ১,৯৪,৮৫৬ জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যগণও অত্যন্ত কার্যকরী ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৩,৫৩১ জন নারী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। এছাড়াও, আমি এ মহতী কার্যক্রমে আহত ২৬৬ জন সদস্যদের পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিঃস্বার্থ এই আত্মত্যাগ জাতিসংঘের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। আমি ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪’ এর সার্বিক সাফল্য এবং সকল শান্তিরক্ষীদের উত্তরোত্তর মঙ্গল, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম