বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিশ্লেষণ, এমন কথা বলেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী!
প্রকাশিতঃ 9:34 pm | August 21, 2022

কালের আলো ডেস্ক :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ নিয়ে, ভারতের সম্পর্ক ও ক্ষমতায় আসা না আসা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে কথা বলেছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পুরো বক্তব্য তিনি নিজ কানে শুনেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত মন্ত্রীর বক্তব্যও পড়েছেন। বিএনপি মন্ত্রীর বক্তব্যকে টুইস্ট করেছে বলেও দাবি করেছেন।
এই বিষয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব মানে বাংলাদেশি মানুষদের দায়িত্ব, বাঙালীদের দায়িত্ব এবং সে কথাটি ভারতের জনগণকে ওনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জানিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার (২০ আগস্ট) চ্যানেল আই’র টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই কথা বলেন। আমাদের পাঠকদের জন্য পুরো আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে উপস্থাপক ও বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বক্তব্য উপস্থাপন করা হলো।
উপস্থাপক : এই যে কূটনীতি ও রাজনীতির ভাষা, আমরা কিন্তু ডিপ্লোম্যাসি জানি যে, ডিপ্লোমেসি কখনও খোলামেলা না। রেখে ডেকে কথা বলা হয়, কিন্তু মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ নিয়ে, ভারতের সম্পর্ক ও ক্ষমতায় আসা না আসা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা নিয়েই তো তোলপাড়, তো সেই জায়গা থেকে, অনেকেই বলছে, ভারতের অনুকূলেই তো বর্তমান সরকার এসেছে, আগামীতেও আসবে এবং তিনি বলেছেন, ভারতকে আমরা বলেছি ক্ষমতায় রাখার জন্য… এই যে অনুরোধ, এই জায়গাগুলো আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, ওনি কি বুঝাতে চান আর সবাই কি বুঝলেন…
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : দেখুন, প্রবাদ আছে না- চিলে কান নিয়ে গেলো, আসলেই কান নিয়ে গেলো কি না, না দেখার আগেই মানুষ দৌড়াতে থাকে চিলের দিকে। আমার মনে হয়, এই ঘটনাটিতে তেমনি একটা কিছু ঘটেছে। আমি নিজেও কিন্তু অবাক হয়েছিলাম যে, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো একজন বিজ্ঞজন, অভিজ্ঞজন, সারাপৃথিবীতে ওনার বিচরণ ছিল। ওনি কিভাবে এ ধরনের কথা বলতে পারেন। এর পরে আমি আসল স্ক্রিপ্টা দেখার চেষ্টা করলাম। স্ক্রিপ্ট দেখে যেটা বুঝতে পারলাম, যে কথাগুলো বিভিন্নজন বলছে তার থেকে ওনি স্ক্রিপ্টে যা দেখলাম সেখানে ওনি সেধরনের কিছু বলেননি। ওনি যেটা বলেছেন, দুটো পার্ট আছে, আমি ফাস্ট পার্টের কথা বলছি… ওনি যেটা বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব মানে বাংলাদেশি মানুষদের দায়িত্ব, বাঙালিদের দায়িত্ব এবং সে কথাটি ওনি ভারতের জনগণকে ওনি জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত যারা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি, আমরা কিন্তু সবসময় এ কথাটি বলি, শেখ হাসিনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য, উন্নয়নের ধারা রক্ষার জন্য তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। আমরা তার সমালোচনা করি, দিনের শেষে এটা বলে শেষ করি, তার বিকল্প নেই।
উপস্থাপক : বিতর্কের জায়গা তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য। .. সেই জায়গাতে তার নিজের দল আওয়ামী লীগ বলছে, তারা বিব্রত এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাহেব আওয়ামী লীগের কেউ না। প্রশ্ন তাহলে ওনি এমপি হলেন কিভাবে?
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : তার আগে আমি একটি কথা বলি, মোমেন সাহেব কিন্তু, ভারতকে অনুরোধ করেননি যে – তোমরা এসে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত করো। ওনি বলেছেন, আমরাই প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত করবো, এ কথাটি তিনি ভারতকে জানিয়েছেন। হ্যা, আপনার এ কথায় রহমান সাহেবের ব্যপারে আমি একমত। ওনি তো আওয়ামী লীগের টিকিটেই পাশ করেছেন। সুতরাং, ওনি আ.লীগের নন, কথাটি সঠিক না।
উপস্থাপক : যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, দলের মধ্যে থেকে, অর্থাৎ আ.লীগের মধ্যেই থেকেই যখন তাদের বর্ষীয়ান তথা প্রেসিডিয়ামরা বলেন যে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাহেব যে আ.লীগের টিকিটে এমপি হলেন অর্থাৎ তাকে তো টিকিট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিলেন। এখন, তার দলের নেতারাই বলছেন তিনি আ.লীগের কেউ না।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : এটা সম্পূর্ণ .. মানে কোন অবস্থাতেই এ কথাটি সঠিক নয়। এবং এ কথাটি বলার অর্থ কিন্তু ইনোসেন্স, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা। প্রধানমন্ত্রী তাকে নমিনেশন দিয়েছেন, সে টিকিটেই..
উপস্থাপক : এর মানে হলো যে, এ কথার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা হয়। কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে টিকেট দিয়েছেন। এখন তার দলই বলছেন, তিনি আ.লীগের কেউ। তবে এমপি ইলেকশন করতে গেলে অবশ্যই দলের সদস্য হতে হবে। তিনি তো দলের সদস্যই… কিন্তু স্যার, প্রশ্ন যে জায়গায়- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জায়গায় তিনি কি খাটো করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলে? বিরোধীমতগুলো তো শোরগোল ফেলে দিয়েছে..
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে বলতেন, তোমরা এসে শেষ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে দাও। তাহলে সে কথাটা, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো সে কথা বলেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত করতে হবে, কারা করবে আমরা। বাংলাদেশের মানুষ। আচ্ছা, এখানে আরেকটি কথা না বললেই নয়, ২০০১ এর নির্বাচনের কথায় আমরা আসি। তখন যে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের প্রধান, ওনি পাকিস্তানি আদালতে নিজেই স্বীকার করেছেন যে- বিএনপি-জামাতকে নির্বাচনে জেতার জন্য প্রচুর টাকা, পাকিস্তান সরকার বিএনপি জামাতকে দিয়েছে। এটা কিন্তু একটি দালিলিক একটি ব্যাপার। অর্থাৎ, সেই নির্বাচনের সময় তারা পাকিস্তানের সাহায্য নিয়েছে।
আরেকটি কথা, সে নির্বাচনের সময় সিঙ্গাপুরে তারেক জিয়ার সাথে কিন্তু ভারতীয় কিছু লোকজনের বৈঠক হয়েছিল এবং সেখানে যেটা জানা যায়, যেটি বহুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে, প্রচারিত হয়েছে সেটি হলো- তারেক জিয়া নিশ্চিত করেছিলেন বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি করা হবে এবং সেই নিশ্চয়তার ভিত্তিতেই ভারত বিএনপিকে সমর্থন করেছিল এবং ইদানিং কালেও দেখেন প্রতিদিন কিন্তু, বিএনপি… যারা নাকি এই ঘটনাকে নিয়ে টুইস্ট করছে আমি বলবো, চেচামেচি করছে; তারা কিন্তু প্রতিদিনই কোন না কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রদূতের সাথে…।
উপস্থাপক : এরকম একটি জায়গা থেকে, বড় জায়গা থেকে কিভাবে একজন মাননীয় মন্ত্রী বলবেন, তখন তো তা বিরোধী দলীয় পক্ষ তা লুফে নিবেই। এটা তো রাজনীতির ধর্ম। কিন্তু তার এ বক্তব্যকে তো তার নিজ দলই লুফে নিয়েছে, তার নিজ দলই তো বিব্রত। নিজ দলই তো বেকায়দায় পড়ে গেছে, সুতরাং, এখানে বিরোধী পক্ষের দোষ কোথায়?
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : একজন ব্যক্তির কথা কিন্তু, দলের কথা হিসেবে নেওয়া যেতে পারেনা। রহমান সাহেব যা বলেছেন, তা কিন্তু দলের কথা নয়। দলের কথা হলে, দলের পক্ষ থেকে যদি কিছু বলা হতো তাহলে তাহলে সেটাকে দলের কথা বলা যেত।
কালের আলো/ডিএস/এমএম