দেশের অগ্রযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:33 pm | November 21, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমি এ’টুকুই চাই, দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনরকম ব্যাহত না হয়। বাংলাদেশ যেন সারাবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। প্রতিটি বাঙালি পৃথিবীর যেখানেই যাক না কেন যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমরা বিজয়ী জাতি, উন্নত জাতি। আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলেছি একটা সম্মানজনক অবস্থানে।

রোববার (২১ নভেম্বর) সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারগণকে দেয়া সংবর্ধনা এবং ২০২০-২০২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালিন পদক প্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁর সরকার সকলের সহযোগিতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে আজ তাঁরই পদাংক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। এমনকি করোনাভাইরাস মোকবেলাতেও বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবিসহ সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শুধু করোনাভাইরাস নয়, আমরা যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছি।

সরকার সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে সমান পা মিলিয়ে চলতে পারে। সে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জন ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে, এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। জাতির পিতা বারবার কারাবরণ করেছেন, এই দেশের মেহেনতি মানুষের জন্যই তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের স্বাধীনতা, কাজেই যা কখনো ব্যর্থ হতে পারেনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, বাংলাদেশকে বিশ্ব মর্যাদায় আমরা আজকে নিয়ে এসেছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। এই লক্ষ নিয়েই আমরা কাজ করছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে অভিনন্দন জানান।

সেনাপ্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে ২০২০-২০২১ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হয়।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁদের হাতে সম্মানী চেক এবং উপহার তুলে দেন।

দিবসটি উপলক্ষে শেখ হাসিনা বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাব প্রাপ্ত এবং খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের মাঝে উপহার প্রদান করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন।

সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীরা সংবর্ধনায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্য ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের এই গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্র করা হয়।

তিনি বলেন, সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয় পেত এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ, নিজেদের বিজয় গাঁথার ইতিহাসকে বিকৃত করার এমন নজির পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই।

পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্য তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ায় ভিন্ন নাম পরিচয়ে বিদেশে রিফ্যুজি হিসেবে জীবনযাপন করতে হয়েছে। এরপর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর একরকম জোর করেই দেশে ফেরেন এবং ’৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠনে সমর্থ হন। আর এরপরই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার প্রয়াস পান। জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক যে ভাষণকে একদা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই ভাষণও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট উজ্জীবনী ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক রেজিষ্টারের প্রামাণ্য দলিলে ঠাঁই করে নেয়। দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ইউনেস্কো আজকে জাতির পিতার নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও প্রবর্তন করেছে অথচ এই নামকে মুছে ফেলার কত চেষ্টাই না ’৭৫ পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী করেছে। কিন্তু ইতিহাসকে যে মোছা যায় না এটাই তার প্রমাণ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রনীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার অনুসরণে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে। শুধু তাই নয় সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, বিজিবি সহ সকল বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর একটাই লক্ষ্য আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক যারা তারা যদি শিক্ষায়-দীক্ষায়, প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন না হয় তাহলে বাংলাদেশের মর্যাদাও কখনো উন্নত হবেনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ যাদের জন্য জাতির পিতা সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্যই তাঁর সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের এই কর্মসূচি কেবল শহর কেন্দ্রিক নয়, তৃণমূলের মানুষ যেন এর সুফল পায় সে পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি।

জাতির পিতার দূরদর্শিতার অনুসরণে তাঁর সরকার দেশকে আজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত গৌরবকে হারিয়ে ফেলেছিল। আজকে আবার সেই গৌরব তাঁরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

আইএসপিআর জানায়, সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ সদস্য বৃন্দ, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টারা, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা, ডেপুটি স্পীকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা, বিচারপতিরা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মূখ্য সচিব, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা, বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধান, ২০২১ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ও একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীরা, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাঁদের উত্তরাধিকারীরা, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তারা এবং তিন বাহিনীর চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল