ঢাকাকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেয়া হবে না: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 6:26 pm | November 20, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

রাজধানী ঢাকাকে আর কোনোভাবেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরসহ সকল পক্ষের সাথে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার (২০ নভেম্বর) হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক আয়োজিত খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

একই সাথে ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মন্ত্রী।

এছাড়া, পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ে নীতিমালার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, বসবাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরীর লক্ষ্যে পরিকল্পনায় অনেকগুলি বৃহত্তম, জলকেন্দ্রিক ও ইকো পার্ক, খেলার মাঠ বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং রিং রোডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ড্যাপের আহ্বায়ক জানান, আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই। এমনকি আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও উচূ ভবনের পক্ষে। কিন্তু এটি করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ইউটিলিটি সার্ভিস, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে করতে হবে।

পাঁচ-সাত কাঠা জমির উপর উচু ভবন এবং যেগুলো নিয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো নিয়ে রিভিউ করা হবে। আর এ পরিমান জায়গাতে কতটুকু ভবন করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আমরা শহরটাকে বসবাসের অযোগ্য বানাতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, যে সব আবাসিক এলাকায় পূর্বেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলো যদি পরিবেশবান্ধব হয়, জনমানুষের ভোগান্তির কারণ না হয় তাহলে সেই এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। শুধু তাই নয় এসব এলাকায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আজকের এই সেমিনারে সকল পক্ষের এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা বসবো এবং যৌক্তিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব পরামর্শ ও মতামত আমাদেরকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের সকল গুণী মানুষের মেধা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়।

অনেকেই বলেন পরিকল্পনা করা সহজ। বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পনা করা খুব সহজ নয়। পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দুটিই চ্যালেঞ্জিং কাজ। সবার হাতকে একত্র করতে পারলে সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে তারা দেশকে নিয়ে ভাবেনি। তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা ছিল না। তাদের শাসনামলে দেশটাকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করার জন্য ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন।

পরে, গাজিপুরের মেয়র বরখাস্ত হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি মেয়র পদে থাকবেন কি থাকবেন না সেটা আইন পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশরাফুল ইসলাম।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতি, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী, এফবিসিসিআই সভাপতি সেমিনারে অংশ নেন।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল