‘অশালীন’ মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়, ফোনে ক্ষমা চাইলেন ব্যারিস্টার মইনুল

প্রকাশিতঃ 10:46 pm | October 17, 2018

সেন্ট্রাল ডেস্ক, কালের আলো:

টেলিভিশন টক শোতে নারী সাংবাদিক ও জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দিয়েছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এ ঘটনার পর থেকে সামাজিক মাধ্যম সহ সবত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইছে।

এই টিভি প্রোগ্রামের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নারী সাংবাদিক ও নারী আন্দোলন কর্মীরা বিবৃতিও দিয়েছেন। বিবৃতিতে মানবাধিকার নেত্রী ড. সুলতানা কামাল, খুশী কবির সাক্ষর করেন।

এছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন ও মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নীসহ শতাধিক নারী সাংবাদিক এবং নারী আন্দোলনকর্মীর বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

এই কাজের জন্যে তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যেও ফেসবুকে ঝড় উঠেছে।

এই অনুষ্ঠানের পর মাসুদা ভাট্টি ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেন-

একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আলোচনায় ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন যুক্ত হলে উপস্থাপকের অনুমতি নিয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলেই এই প্রশ্ন তুলছেন যে, আপনি এই ঐক্যফ্রন্ট-এর অায়োজনে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না? তখন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন আমাকে `চরিত্রহীন‘ বলে গাল দেন।

তার এই গালি শোনার পর যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে:

১. আজকে তফাজ্জল হোসেন মাণিক মিয়া বেঁচে থাকলে কী করতেন?
২. ১/১১-র সময়ে এর হাতে দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রের দায়িত্ব?
৩. এরাই করবে গণতন্ত্র উদ্ধার? যে গণতন্ত্রে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন গালি শুনতে হয়?
৪. আইন এক্ষেত্রে কী বলে?
৫. নারী বলেই চরিত্রহীন বলে গাল দেওয়া যদি এতোটাই সহজ হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতাসীন হলে নারীর অবস্থান কী হবে এদেশে?
৬. ড. কামাল হোসেনের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশে এরকম একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তিকে কী মানায়? এদের সঙ্গে মিলে ড. কামাল হোসেন কী গণতন্ত্র দেবেন আমাদেরকে? চরিত্রহীন বলার গণতন্ত্র?
৭. রাজনীতিকে এতোটা পঁচিয়ে কারা নিজেদের রাজনীতির বাইরের সুশীল সমাজ বলে ১/১১-র সরকার গঠন ও তাকে সমর্থন দিয়েছিল?

টিভি টক শোতে যা বলেছেন মইনুল
৭১ টিভির টক শোতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে মিথিলা ফারজানার উপস্থাপনায় আলোচনা চলছিল। আর লাইভে আলোচনায় সংযুক্ত হন মইনুল হোসেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা গত ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পর ফেসবুকে ২০০৫ সালের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিবিরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে আর তিনি মনে করেন শিবির দেশ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।’

সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে উঠা প্রশ্নটিই মইনুলে হোসেনের কাছে জানতে চান মাসুদা ভাট্টি । তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ঐক্য ফ্রন্টে আপনি একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। এটা আপনার দাবি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আপনি সেখানে জামায়াতের একজন প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত থাকেন। আসলেই আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত থাকেন কি না।’

মাসুদা ভাট্টি’র করা প্রশ্ন শুনেই ক্ষেপে যান মইনুল। উত্তেজিত কণ্ঠে উত্তরে মাসুদাকে বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনাকে চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’

এছাড়া মইনুল হোসেন আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার কোন প্রশ্ন নাই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন। শিক্ষিত ভদ্র মহিলা হিসেবে অন্য প্রশ্ন করেন।’

অবশেষে মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে ক্ষমা চাইলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন

‘আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’ মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে একথা বলার পর আজ তার কাছে ফোন করে ক্ষমা চাইলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।

ফোনে তিনি মাসুদা ভাট্টিকে বলেন, ‘আমার ব্যবহারটা অত্যন্ত লজ্জাজনক হয়েছে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।’ তবে ফোনে মাসুদা ভাট্টি তাকে জবাব দেন, ‘আপনি তো আমাকে অন-এয়ারে টেলিভিশনে এসব কথা বলেছেন, এভাবে একা ফোনে বললে তো হবে না।’

উত্তরে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘যদি টেলিভিশনে সুযোগ হয় আমি সেখানেও বলবো।’

এ বিষয়ে মাসুদা ভাট্টি  বলেন, উনি ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে ফোন করেছিলেন কিন্তু আমি বলেছি এভাবে ক্ষমা চাইলে হবে না। যেহেতু আমাকে উনি অন-এয়ারে বলেছেন, তাই ক্ষমাটা অন-এয়ারেই চাইতে হবে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানাবেন বলে জানান তিনি।

কালের আলো/এনএল