পরীক্ষামূলক রেড, গ্রিন ও ইয়েলো জোনে ভাগ হচ্ছে ডিএনসিসির ওয়ার্ড

প্রকাশিতঃ 6:21 pm | June 03, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ডকে তিনটি জোনে ভাগ করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা আক্রান্তের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষামূলকভাবে ডিএনসিসির ১টি ওয়ার্ড ৩টি জোনে ভাগ করা হবে, গ্রিন, ইয়েলো ও রেড। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বুধবার (০৩ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিয়ে ডিএনসিসির প্রথম কর্পোরেশন সভায় মেয়র এসব কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে ডিএনসিসি এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। প্রতিদিন ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাছে। মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে থেকেই এ মহাদুর্যোগের সময়ে আমিও নগরবাসীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

‘সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের পাশে থেকে তাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগানোর মাধ্যমে এবং ডিএনসিসির সাথে সমন্বয় করে আমি নগরবাসীর জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এই দুর্যোগের সময়ে নগরবাসীর জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখতে আপনাদের সাথে নিয়ে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।’

করোনা মোকাবিলায় ডিএনসিসির বিভিন্ন কার্যক্রম কাউন্সিলরদের কাছে তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত ডিএনসিসি ১০টি ওয়াটার বাউজারের সাহায্যে ৮৬ লক্ষ ১০ হাজার লিটার তরল জীবাণুনাশক ডিএনসিসির প্রায় ১২ কোটি ৯২ লক্ষ বর্গফুট এলাকায় ছিটানো হয়। এছাড়া ৭টি স্থানে করোনা স্যাম্পল কালেকশান বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব (পিসিআর মেশিন) স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে সাময়িকভাবে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশান সেন্টার নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

‘করোনা মোকাবেলায় ডিএনসিসির নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ডিএনসিসির ১৬টি কাঁচাবাজার উন্মুক্তস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে যেন জনগণ যাতে আরো নিরাপদে দৈনন্দিন বাজার সম্পন্ন করতে পারেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৫ লক্ষাধিক অসহায়, দুঃস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে ডিএনসিসি।’

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া যেন গত বছরের মত ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে সেইজন্য আমি আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। ১০ মে থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ৪ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে। কোথাও জমে থাকা পানি বা এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে, সেটি যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানও হয়, সেখানে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

‘১৬ মে থেকে পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মী দ্বারা ৫টি ওয়ার্ডে ঈদের আগ পর্যন্ত চিরুনী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আগামী ৬ মে থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করা হবে। অন্তত আগস্ট পর্যন্ত প্রতিমাসে ১০দিন ব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে বিনামূল্যে ডিএনসিসি এলাকার ৫টি নগর মাতৃসদন ও ২২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১১ মে থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

মেয়র বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য ইতিমধ্যে দুটি অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকার এডিস মশার লার্ভা পাওয়া সকল বাড়ি বা স্থাপনার ছবিসহ তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। যা পরবর্তীতে মনিটরিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে।

তিনি বলেন, সমগ্র ডিএনসিসিকে ৪০০ মিটার বাই ৪০০ মিটার গ্রিডে ভাগ করা হবে। প্রতিটি গ্রিডের বসবাসরত একজন গৃহিণীকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে। একটি গ্রিডে কর্মরত মশককর্মীর কাজে ঐ গ্রিডে বসবাসরত গৃহিণী সন্তুষ্ট কিনা ডিএনসিসির একটি অ্যাপের মাধ্যমে তিনি তা প্রকাশ করবেন। তার সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করবে মশক নিধন কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি। ঐ অ্যাপের মাধ্যমে মেয়রসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ কোনো এলাকার মশক নিধন কার্যক্রমের কী অবস্থা তাৎক্ষণিক জানতে পারবেন। জনগণকে মশকনিধন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতেই এ ব্যবস্থা চালু করা হবে।

ডিএনসিসির এই নগরপিতা বলেন, বর্ষাকালে রাস্তায় যেন পানি না জমে সেই জন্য নগরীর ড্রেন, খাল পরিষ্কার এবং খনন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কালশি খাল খনন করা হয়েছে। আশকোনা এলাকায় সিভিল এভিয়েশনের এডি-৮ খাল খনন শুরু করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বনানী প্রধান সড়ক ও উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, ডিএনসিসির ৩৬টি ওয়ার্ডে ১টি করে ৩৬টি স্যাটেলাইট অগ্নি নির্বাপণ স্টেশন স্থাপন করা হবে। এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এ স্যাটেলাইট স্টেশনে মশা নিধন, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থাও থাকবে।

‘ডিজিটালি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকল্পে “সবার ঢাকা” অ্যাপ এর কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসী যে কোনো স্থান থেকে ডিএনসিসির সেবা এবং কাজের ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ সমাধানের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।’

মেয়র আতিক বলেন, তাছাড়া নাগরিকরা যাতে অনলাইনে যে কোনো স্থান থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনসহ অনেক নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রতি মাসে একবার ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে নগরবাসীর অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া, সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য কাউন্সিলরদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে নগরবাসীর সমস্যাগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক বা দ্রুততম সময়ে সমাধান করা সম্ভব হবে।

মেয়র সকল কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ আতিকুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন, তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’।

রাজস্ব আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, মার্চ থেকে ডিএনসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় বন্ধ রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তবে এ তিন মাসে যে ১৫% সারচার্জ/জরিমানা হয়েছে তা দিতে হবে না বলে তিনি জানান। আগামী অর্থবছর থেকে সম্প্রসারিত এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডে অবস্থিত শিল্প, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায় করা হবে বলে মেয়র জানান। তবে এখনই হোল্ডিং ট্যাক্স/গৃহকর আদায় করা হবে না।

সভায় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হাই, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর সাইদুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন, প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এনএল/বিএমকে