করোনায় সিএমপি কর্মকর্তার মৃত্যুতে হতাশা
প্রকাশিতঃ 11:39 am | July 14, 2020

কালের আলো সংবাদদাতা:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ অঞ্চলের উপকমিশনার মো. মিজানুর রহমান মৃত্যুতে আতঙ্কিত সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। অনেকের ভেতরে নতুন করে হতাশা নেমে এসেছে।
জানা যায়, উপপুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান গত ২৮ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়। গতকাল ভোরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, উপপুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানের অকালে চলে যাওয়ায় আমরা খুবই মর্মাহত। চলমান করোনা যুদ্ধে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত যোদ্ধা। তার মৃত্যু পুলিশ সদস্যদের কাছে চলমান করোনা যুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
পুলিশ কমিশনার এ কর্মকর্তার মৃত্যুকে প্রেরণা হিসেবে নেওয়ার কথা বললেও সাধারণ অনেক পুলিশ সদস্য হতাশা লুকাননি। একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, চলমান করোনা যুদ্ধে শুরু থেকে পুলিশ সম্মুখে থেকে কাজ করলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পায়নি। আক্রান্ত হওয়ার পর পাওয়া যায়নি পর্যাপ্ত চিকিৎসা। তারা বলেছেন, করোনার কারণে সব পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিন মাস টানা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে অনেকে মানসিকভাবে চাপে পড়েছিলেন। বিশেষ করে দিনের পর দিন ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা এই মানসিক চাপের কথা স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি পুলিশকে সীমিত পরিসরে ছুটি দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, পুলিশ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাধারণ জনগণকে বাধ্য করলেও নিজেরা তা মানতে পারেনি। দায়িত্ব শেষে একটি গাড়িতে অনেক পুলিশ সদস্যকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। ব্যারাকে অনেককে একসঙ্গে খেতে ও থাকতে হয়েছে। ফলে একজন আক্রান্ত হলে দ্রুত অন্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাকালের শুরুতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি লকডাউন করতে গিয়েও আক্রান্ত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাড়ি লকডাউন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যকে পূর্ণাঙ্গ পিপিই পরিধান করা দরকার ছিল। কিন্তু পুলিশ তা পায়নি। বাসাবাড়ি লকডাউনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা কখনো কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারেননি। এ সবের প্রয়োজনীয়তা পুলিশ সদস্যরা জানলেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তা পালন করা যায়নি। এসব কিছু পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়।
জানা গেছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগরে পাঁচজন ও মহানগর এলাকায় পাঁচজন মারা গেছেন। জেলা পুলিশের মধ্যে ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মোখলেছুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর সীতাকু- থানার এসআই একরামুল হক নিজ বাসায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়।
মিজানুর রহমান ছাড়া করোনায় মারা যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অপর চারজন পুলিশ সদস্য মারা যান। তারা হলেন ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. নঈমুল হক, হালিশহর থানার কনস্টেবল নেকবার, পিওএম (উত্তর) কনস্টেবল মামুন উদ্দিন ও ট্রাফিক কনস্টেবল আ ফ ম জাহেদ। এর বাইরে নৌ পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ ওমর ফারুক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৪৪০ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক।
কালের আলো/এসবি/এমআরকে