তারেক রহমান মুক্ত অর্থনীতির কথা ভাবছেন : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
প্রকাশিতঃ 12:14 am | July 24, 2025

ময়মনসিংহ প্রতিবেদক, কালের আলো:
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শুধু রাজনীতি গণতন্ত্রায়ণের মাধ্যমে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। অর্থনীতির গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। দেশের সব মানুষকে অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সরকারের কাজ হচ্ছে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অর্থনীতিকে ফ্যাসিলেটেড করা (সহজ করা)। কিন্তু বিগত দেড় দশকে ব্যবসা–বাণিজ্য জনগণের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কিছু লুটেরার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই লুটেরারা ব্যাংক লুট করেছে, শেয়ারবাজার লুট করেছে, এ দেশের অর্থ পাচার করেছে, দেশের যত মেগা প্রজেক্ট লুট করেছে।
দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ বিভাগে ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি। বুধবার (২৩ জুলাই) ময়মনসিংহ নগরের একটি রিসোর্টে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা: ময়মনসিংহ বিভাগ’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার চেম্বার ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ী নেতারা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের নানা ভোগান্তির কথা উঠে আসে। সরকারি কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে দেশের ব্যবসায়ীরা যে কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন সেখানে থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেকগুলো কাজ যেগুলো সরকারি কর্মকর্তারা করে, সেগুলো আপনাদের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর হাতে তুলে দিতে পারি। সে জন্য আপনাদের সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ব্যাংকগুলোতে সুদের হার বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘১৩ থেকে ১৪ শতাংশ ইন্টারেস্ট দিয়ে ব্যবসা হবে না। এ কারণে ক্রেতাকে উচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে, যাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন তাঁদের ঋণ পাওয়ার জন্য আমরা আগামীতে পলিসি করব। একেকজন পাঁচ-সাতটি ব্যাংকের মালিক হয়ে বসে আছেন, কিন্তু তাঁদের ডিপোজিট কত, সব তো মানুষের টাকা। তারেক রহমান মুক্ত অর্থনীতির কথা ভাবছেন। অর্থনীতিতে দখলদারত্ব চলবে না।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অফুরন্ত হস্তশিল্প আছে, আমরা সেগুলোর কথা চিন্তা না করে মিল-কারখানার কথা চিন্তা করেছি। হাত দিয়ে তৈরি পণ্যের দাম বিশ্বজোড়া। মিল-ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি পণ্যের চেয়ে এসব পণ্যের দাম বেশি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হস্তশিল্প যাঁরা করছে, তাঁদের আমরা কারিগরি ও ডিজাইনের সাপোর্ট দেব। ভালোভাবে সাপোর্ট দিয়ে মার্কেটিং করলে হস্তশিল্পের পণ্য সারা বিশ্বে অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে। এ খাতে দেশের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা বাজেট বরাদ্দ করব এবং সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হবে।’
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সরকার আগামীতে ক্ষমতায় গেলে অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়া হবে। আমরা মনে করি অর্থনীতিকে ড্রাইভ করবে প্রাইভেট সেক্টর। বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কেউ উদ্যোগী হলে সহযোগিতা করা হবে।’
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী মনসুর আলম চন্দন। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসায় ধীরগতির কারণে মুনাফা ও পুঁজি হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহত্তর ময়মনসিংহে গত সরকারের সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি বর্তমানে বিরাজ করছে না। এখানকার পোর্টগুলো বন্ধের পথে। বিগত সরকারে ব্যাংকে যে পরিমাণ মুনাফা দিতে হতো তা এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হয় ব্যবসা বন্ধ করতে হবে; তা না হলে ব্যাংক মুনাফা কমাতে হবে।
প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগামীতে কীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে মনসুর আলম আরও বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। ময়মনসিংহে অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু স্বপ্নেই দেখলাম। আমাদের যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কথা ছিল তা যেন বিএনপি সরকারের প্রথম একনেকে পাস করা হয়।’
ঠিকাদার, ওষুধ ও ক্লিনিক ব্যবসায়ী, ইটাভাটা ব্যবসায়ী, পুস্তক ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা, আমদানি–রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৪০০ ব্যবসায়ী এতে অংশ নেন। সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বিগত সময়ে নানা হয়রানি ও ব্যাংক মুনাফা বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করেন। রেল ও সড়কপথের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুজ্জামান ছোটন, বিসিকের সভাপতি আবু সাঈদ, নেত্রকোনা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি আজাদ রহমান, শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য শওকত হোসেন, কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
কালের আলো/এমএএইচএন