টাইগারদের বোলিং তান্ডবে কোনঠাসা আফগানিস্তান

প্রকাশিতঃ 10:41 pm | June 24, 2019

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:

বাংলাদেশের দেয়া ২৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কোনঠাসা অবস্থায় আছে আফগানিস্তান। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আফগানিস্তান ৪০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান করেছে।

এর আগে ইনিংসের ১১তম ওভারে এসে বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের দেখা পায়। সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার রহমত শাহকে। দলীয় ৪৯ রানের মাথায় বিদায় নেওয়ার আগে রহমত শাহ ৩৫ বলে তিন চারে করেন ২৪ রান। ইনিংসের ২১তম ওভারে মোসাদ্দেক ফিরিয়ে দেন তিন নম্বরে নামা হাসমতউল্লাহ শহিদিকে। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৩১ বলে ১১ রান করা হাসমতউল্লাহ।

ইনিংসের ২৯তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। ৪৭ রান করা গুলবাদিন নাইবকে ফিরিয়ে দেওয়ার এক বল পরে বোল্ড করেন মোহাম্মদ নবীকে। দলীয় ১০৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানরা। দলীয় ১১৭ রানের সময়ে পঞ্চম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ম্যাচের ৩২.২ ওভারে সাকিবের বলে অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা সাব্বিরের তালুবন্দি হন আসগর আফগান। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ২০ রান। ৩৬তম ওভারে লিটনের দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন ১২ বলে ১১ রান করা ইকরাম আলী।

টুর্নামেন্টের ৩১তম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান দলপতি গুলবাদিন নাইব। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তোলে ২৬২ রান। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ইনফর্ম দুই টাইগার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান। দারুণ ব্যাট করেছেন তামিম, মোসাদ্দেক, মাহমুদউল্লাহরা।

বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোলে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আফগানদের মুখোমুখি টাইগাররা। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ৬ ম্যাচের সবকটিতেই হারা আফগানরা। বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটা ৪০ মিনিটে শুরু হয় ম্যাচটি। গাজী টিভি ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করছে। এই ম্যাচে সাব্বির রহমানের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন এবং রুবেল হোসেনের জায়গায় এসেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন লিটন দাস। মুজিব উর রহমানের বলে শর্ট কাভারে হাশমতউল্লাহ শহিদির তালুতে বন্দি হন লিটন। মাঠের আম্পায়ার আউটের সফট সিগন্যাল দিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠান। টিভি রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিম দার লিটনকে আউট বলে ঘোষণা করেন। যদিও আউটটি নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিদায়ের আগে ১৭ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৬ রান করেন লিটন। বাংলাদেশ দলীয় ২৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায়।

ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে তামিমকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ নবী। দলীয় ৮২ রানের মাথায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। তামিম বিদায়ের আগে করেন ৩৬ রান। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে সাকিবকে এলবির ফাঁদে ফেলেন রশিদ খান। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচে যান সাকিব। ব্যক্তিগত ২৩ রানে সাকিব আবারো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে উঠেন। আর ব্যক্তিগত ৩৫ রান করে সাকিব ১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে এক হাজার রান করেন। ইনিংসের ৩০তম ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন সাকিব। তার আগে চলতি বিশ্বকাপে তিনটি ফিফটি আর দুটি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন। ৬৯ বলে এক বাউন্ডারিতে করেন ৫১ রান। দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়।

ইনিংসের ৩২তম ওভারের শেষ বলে মুজিব এলবির ফাঁদে ফেলেন সৌম্য সরকারকে। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি ১০ বলে ৩ রান করা সৌম্য সরকার। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। এরপর জুটি গড়েন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে আসে ৫৬ রান। দলীয় ২০৭ রানের মাথায় বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। গুলবাদিন নাইবের বলে মোহাম্মদ নবীর হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি ৩৮ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ২৭ রান।

মুশফিক টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পিছনেই ছুটছিলেন। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৮৩ রানে। তার আগে মোসাদ্দেককে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪৪ রান যোগ করেন মুশফিক। ৮৭ বলে চারটি চার আর একটি ছক্কায় মুশফিক তার ইনিংসটি সাজান। মোসাদ্দেক হোসেন ২৪ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৩৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

মুজিব উর রহমান ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে পান তিনটি উইকেট। দৌলত জাদরান ৯ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। মোহাম্মদ নবী ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে পান একটি উইকেট। গুলবাদিন নাইব ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে দুটি উইকেট তুলে নেন। রশিদ খান ৯ ওভারে ৫২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ১ ওভারে ৭ রান দিয়ে রহমত শাহ উইকেটশূন্য থাকেন।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা জয় দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা হয় টাইগারদের। তবে এরপর দুই ম্যাচেই হেরে বসে। আর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচেই উইন্ডিজকে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে হারিয়েছে টাইগাররা। আর অজিদের বিপক্ষে লড়াকু হারেও প্রশংসিত হয়েছে। ছয় ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ৫ ম্যাচ।

অন্যদিকে নিজেদের ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই হার আফগানদের। অবস্থানও করছে পয়েন্ট টেবিলের একদম তলানিতে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারতে হয়েছে টাইগারদের। কিউইদের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে টাইগাররা হেরেছে মাত্র ২ উইকেটে আর ইংলিশদের বিপক্ষে ১০৬ রানের বিশাল পরাজয়। আর শেষ ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে লড়াকু হার।

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

আফগানিস্তান একাদশ: গুলবাদিন নাইব (অধিনায়ক), ইকরাম আলী, রহমত শাহ, হাসমতউল্লাহ শহিদি, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, আসগর আফগান, দৌলত জাদরান এবং সামিউল্লাহ শেনওয়ারি।

কালের আলো/এআর/এমএম