অঝোরে কাঁদলেন শাওনের বাবা, কাঁদালেন সবাইকে

প্রকাশিতঃ 12:22 am | March 09, 2018

উবায়দুল হক, কালের আলো:

রহস্যময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করা ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফী শাওনকে নিয়ে আবেগঘন কথা বলেছেন তার বাবা।

ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস বলেছেন, ‘আমার ছেলে শাওনকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমার ছেলে রাজি হয়নি। সে বলেছিল- বাবা আমি তোমার পাশে থেকে ময়মনসিংহেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে চাই।’

ছেলেকে শেষ বিদায় দেওয়ার আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন এমন কথা। শাওনের গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে এবার যেন মুখ খুললেন। তিনি ফরিয়াদ করে বলেছেন, যারা শাওনের এ অবস্থা করেছে তাদেরকে আল্লাহ তুমি জনগনের সম্মুখে ধ্বংশ করে দিও।

বৃহস্পতিবার বাদ এশা নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা ছাত্রলীগ নেতা শাওনের জানাজার আগে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলছিলেন তার বাবা এমএ কুদ্দুস।

বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, কি যে দু:সহ যাতনা আর ভারি বোঝা তা একমাত্র বুঝতে পারছিলেন এমএ কুদ্দুস। তিনি বলছিলেন, ‘টানা ১১দিন আমার ছেলে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর ছিলো। হাসপাতালে তার শয্যাপাশে আমি ও আমার স্ত্রী ছিলাম। টানা ৭ দিন শাওন লাইফ সাপোর্টে ছিলো। সে অসম্ভব কষ্ট করেছে। ছেলের এ কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার একমাত্র ছেলেকে আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চেয়েছি। ফরিয়াদ করে আমি বলেছি- তুমি আমাকে নিয়ে নাও, আমার ছেলেকে ভাল করে দাও। আজ ফজরের নামাজ পড়ে আমার ছেলের করুণ অবস্থা দেখে আমি বলেছি- হে পরম করুণাময় আল্লাহ, হয় তুমি আমার ছেলেকে সুস্থ করে দাও, নয়তো তুমি তাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে তোমার কাছে নিয়ে যাও।’

সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এমএ কুদ্দুসের কান্নায় সবার চোখেই জল চলে আসে। এসময় অনেককেই শাওনের কফিনের পাশে কাঁদতে দেখা যায়।

এমএ কুদ্দুস ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। দলের দু:সময়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর দীর্ঘসময় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ময়মনসিংহ জেলা আ’লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। মুজিবের আদর্শধারী এমএ কুদ্দুস নিজের সন্তানকেও উৎসাহিত করেছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। জেলা ছাত্রলীগে শাওনের মূল প্রেরণাই ছিল তার বাবা।

এদিকে শহরে নানা কানাঘুষা চলছে শাওনের গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে। সন্দেহের তীর কার দিকে এনিয়ে স্পষ্ট কোন আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। নানা কানাঘুষা এটি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে। তবে বাবার বক্তব্য থেকে আঁচ করা যাচ্ছে শাওনের মৃত্যুর ঘটনাটি স্বাভাবিক নয়। শাওন যে খুনের শিকার হয়েছে তার বাবার বক্তব্য থেকে এটিই স্পষ্ট।

এর আগে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে নগরীর জেলা পরিষদ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ছাত্রলীগ নেতা শাওন। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ইবনেসিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জীবনের শেষ ৭দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন শাওন। টানা ১১ দিন জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি। বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে রাজধানীর ইবনেসিনা হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন শাওন।

আরও পড়ুন: কারা খুন করলো ছাত্রলীগ নেতা শাওনকে?

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email