ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না, ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 6:26 pm | March 07, 2018

সিনিয়র প্রতিবেদক, কালের আলো:

স্বাধীনতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ‍মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাসও প্রতিশোধও নেয়, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। তা প্রমাণিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারাই আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। আগামীতে স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌঁছান। এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় জনসভা। সভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায় নেতা কর্মীদের পদচারণায়। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকাগুলোতেও দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।

১৯৭১ সালের এই দিনে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই (তৎকালীণ রেসকোর্স ময়দান) বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ডাক দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চ জাতির পিতা গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’ তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র ভাষণ, যা লিখিত ছিল না। ছিল জাতির পিতার মনের কথা। যে ভাষণের মধ্য দিয়ে নিপীড়নের ইতিহাস যেমন উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের জন্য কী কী করণীয় তা বলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ অক্ষরে অক্ষরে তা মেনে চলত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভাষণটি আড়াই হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ভাষণ হিসেবে একটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যার লেখক জ্যাকব এফ ফিল্ড।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাতে পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ্ সময় একটা প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা, বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি লাভ করা, বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, শরণার্থীদের পুনর্বাসন, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করা, রাস্তাঘাট মেরামত করেছিলেন তিনি। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর পর ২১ বছর বাংলার মানুষ ব্ঞ্চনার শিকার হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘খুন হলে সবাই বিচার চায়। আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বসভ্যায় আবার মর্যাদা নিয়ে চলবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয়। অন্যরা থাকলে হয় না কেন? কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি।’

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় না আসার কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস আমাদের মূল্যবান সম্পদ। আমেরিকা গ্যাস উত্তোলন করতে চেয়েছিল আর সেই গ্যাস কিনতে চেয়েছিল ভারত। আমি বললাম, এ গ্যাসের মালিক জনগণ। বাংলাদেশে অন্তত ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ থাকবে। গ্যাস মজুদ না রেখে বিক্রি করতে পারব না।

তিনি বলেন, ‘জনগণের স্বার্থ দেখেছি বলেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আমরা ভোট বেশি পেলাম কিন্তু সিট পেলাম না। আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের মন্ত্রী বানালেন খালেদা জিয়া। খুনিদের চাকরি দেওয়া, তোষামুদি করা চলতে থাকল। খুনি রশিদ, হুদাকে পার্লামেন্টে বসানো হলো।

‘যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেল মন্ত্রী, হয়ে গেল উপদেষ্টা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা-স্বাধীনতার জন্য এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?’

বিএনপি ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুইজন এমপিকে হত্যা করা হয়েছে। মা বোনকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। ঘর-বাড়ি দখল করে পুকুর কেটেছে।’

 

কালের আলো/এসএ/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email